ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাবুল আক্তারের হাতের লেখা সিআইডিতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২২
বাবুল আক্তারের হাতের লেখা সিআইডিতে ...

চট্টগ্রাম: মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের হাতের লেখা নমুনা সংগ্রহ করেছে আদালত। সেখানে এ, বি, সি, ডি সহ তিন পৃষ্ঠার হাতের লেখা নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

 

এই নমুনা আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে (সিআইডি) পাঠিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো।  

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন বাবুল আক্তার আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান।

ওই সময় গায়ত্রী ‘তালিবান’ ও ‘বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট’ নামে দুইটি বই বাবুল আক্তারকে উপহার দেন। এর মধ্যে ‘তালিবান’ বইয়ের ২৭৬ পৃষ্ঠার পরের পাতায় বিভিন্ন তারিখ উল্লেখ করে দুজনের সম্পর্কের বিভিন্ন তথ্য লিখেন বাবুল আক্তার। বই দুইটি জব্দ করেছে পিবিআই।  

বইয়ের লেখার সঙ্গে বাবুল আক্তারের লেখা মিলানোর জন্য গত ৭ মার্চ বাবুল আক্তারের ইংরেজি হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার জন্য আবেদন করা হয়। ২২ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল হালিমের খাস কামরায় বাবুল আক্তারের ইংরেজি হাতের লেখা নমুনা নেওয়া হয়। এর আগে সকালে একই আদালত বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহের আদেশ দেন।

মাহমুদা খানম মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের অভিযোগ, বাবুল আক্তারের মোবাইলে পাঠানো গায়ত্রীর ২৯টি মেসেজ খুনের শিকার হওয়ার আগে মিতু তার ব্যবহৃত একটি খাতায় লিখে গেছেন। এছাড়া বাবুল আক্তারকে গায়ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া দুটি বইয়ে তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কের কিছু লিখিত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। বিষয়টি জেনে যাওয়ার পর মিতুর সঙ্গে বাবুলের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এর জেরে বাবুল আক্তার মিতুকে খুনের পরিকল্পনা করেন এবং সহযোগীদের নির্দেশ দিয়ে মিতুকে হত্যা করা হয়।  

আদালত ও পিবিআইয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, তিন পৃষ্ঠায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখা নেওয়া হয়েছে। সেখানে এ, বি, সি ও ডি ইংরেজি বর্ণমালাসহ একাধিক ইংরেজি হাতের লেখা রয়েছে।  

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের ইনচার্জ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করেছি। সেখানে কি লেখা হয়েছে, সেটা গোপনীয় বিষয়, বলা যাবে না। বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষার জন্য ২৪ মার্চ সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।  

২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। ঐদিনই মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হয়। গত ৬ মার্চ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত।  

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে নগরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। এ ঘটনায় ঢাকায় অবস্থান করা মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে নিজের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ঘটনার কয়েকদিন পরেই মামলার তদন্ত নতুন মোড় নেয়। একপর্যায়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার শ্বশুর।

পাঁচলাইশ থানা পুলিশের পর চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের ভার পায় পিবিআই। মিতু হত্যার পর বাবুল আক্তার প্রথমে ঢাকার মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে উঠেছিলেন। ২০১৬ সালের ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে ঢাকার ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে এনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বর্তমানে তিনি আছেন ফেনী কারাগারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২২
এমআই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।