ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

স্বপ্ন যেখানে সত্যি 

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
স্বপ্ন যেখানে সত্যি  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে নগরের পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার, তা আজ বাস্তবায়নের পথে।

৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এই প্রকল্পে।

দুই টিউবের এই টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।

 

দেশের অনেকেই আছেন যাদের কখনও ধারণা ছিলনা টানেল সম্পর্কে। কিন্তু সেই টানেলই এখন বাস্তব বাংলাদেশে। একসময় বাংলাদেশের গায়ে লেগে থাকা তলাবিহীন ঝুঁড়ির তকমা অনেক আগেই ঘুচেছে। স্বপ্ন দেখা যেখানে অবাস্তব ছিল, সেই স্বপ্নই যেন এখন চাইলেই ছুঁয়ে দেখা যায়। নদীর তলদেশ ফুঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ও তেমন একটি স্বপ্নের নাম।  

নদীর তলদেশে চলবে দ্রুত গতির গাড়ি। এ টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে অন্তত ৫০ কিলোমিটার। আসবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সাশ্রয় হবে জ্বালানি, বাঁচবে সময়। সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি।  

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল খননকাজ উদ্বোধন করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে চীন অর্থায়ন করছে প্রায় চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ধারণাকে সামনে রেখে নির্মাণ হচ্ছে এ টানেল। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে টানেলের কাজ শেষ হয়েছে ৮১ শতাংশ।

টানেল নির্মাণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সেতু মন্ত্রণালয় বলছে, কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম শহরকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে। এক ভাগে রয়েছে নগর ও বন্দর এবং অপর ভাগে রয়েছে ভারি শিল্প এলাকা।

কর্ণফুলী নদীর ওপর ইতিমধ্যে ৩টি সেতু নির্মিত হয়েছে, যা বিদ্যমান বিপুলসংখ্যক যানবাহনের জন্য যথেষ্ট নয়। নদীর মরফলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলি জমা একটি বড় সমস্যা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতার জন্য বড় হুমকি। এই পলি সমস্যার মোকাবিলায় কর্ণফুলী নদীর ওপর আর কোনও সেতু নির্মাণ না করে এর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা জরুরি ছিল।  

এজন্য সরকার জেলার দুই অংশকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। টানেল সাইটে নদীর প্রস্থ ৭০০ মিটার এবং পানির গভীরতা ৯-১১ মিটার। এই টানেল দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ যানবাহন চলাচল করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।