ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভ্রাম্যমাণ দোকানই ভরসা মধ্যবিত্তের, আছে চাঁদার খড়গ

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
ভ্রাম্যমাণ দোকানই ভরসা মধ্যবিত্তের, আছে চাঁদার খড়গ ...

চট্টগ্রাম: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে নগরে বিভিন্ন সড়কের পাশে ভ্যানগাড়ির ভ্রাম্যমাণ দোকানই হয়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত পরিবারের ভরসা। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততায় যারা বাজারে যাওয়ার সুযোগ পান না, তারা চাকরি শেষে রাতে বাসায় ফেরার পথে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে নানান জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যান।

রিকশা-ভ্যানগাড়িতে কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করছেন অনেক ব্যবসায়ী। সকাল থেকে রাত অব্দি নগরের বিভিন্ন সড়ক ও অলি-গলিতে চলে বেচাকেনা।

অনেক বেকার যুবকও এসব দোকান চালিয়ে সামলাচ্ছেন সংসার।  

জানা গেছে, নগরের বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেইট, পলিটেকনিক মোড়, চকবাজার, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, নতুন ব্রিজ, নিউ মার্কেট, দেওয়ানহাট, কাজীর দেউড়ি, মুরাদপুর, ছোটপুল, অলংকার মোড়, সিটি গেইট, অক্সিজেন মোড়সহ সিটি করপোরেশনের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে প্রতিটি ভ্যানগাড়িকে দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে পুলিশকে ভাড়া দিতে হয়। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ মনোনীত একজন ‘মাঝি’ সবার কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে পুলিশের টহল দলকে বুঝিয়ে দেয়। কাজের সন্ধানে চট্টগ্রাম নগরে আসা নিম্ন আয়ের অনেকের পক্ষেই চাঁদা দেওয়া সম্ভব হয় না। কেউ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে, তাকে শারীরিকভাবে নাজেহাল এবং এলাকা ছাড়া করা হয়।  

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, একটি ভ্যানগাড়ি দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ টাকায় ভাড়া নেওয়া যায়। আর দুই-চার হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের সবজি, ফলমূল অথবা ফুসকা, চটপটি, রুটি-হালুয়া জাতীয় খাবারের দোকান দেওয়া যায়। ২০-২৫ হাজার টাকা পুঁজি হলে সোয়েটার, গেঞ্জি, প্যান্ট ইত্যাদি গার্মেন্ট পণ্যের ব্যবসা করা যায়। অনেক যুবক এখন ভ্রাম্যমাণ দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।  

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে দশটা। নগরের বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের উল্টোদিকে ভ্যানগাড়িতে করে কেউ বিক্রি করছেন নানা ধরনের শাক-সবজি, ফল, আবার কেউ বাদাম, ফুসকা, চটপটি, হালুয়া-রুটি, চিতই-তেলের পিঠা জাতীয় খাবার। কেউ গার্মেন্ট পণ্য, নানা ধরনের কসমেটিকস, বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিক্রি করছেন। আলাপকালে তারা জানান, চাঁদা দিয়েই তাদের ব্যবসা করতে হচ্ছে। ‘মাঝি’ এসে প্রতিদিন চাঁদা নিয়ে যায়।

বহদ্দারহাট এলাকায় ভ্যানগাড়িতে করে শাক-সবজি বিক্রি করেন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী  মুকিম উদ্দিন। বড় ভাই দিনে নগরের বিভিন্ন অলিগলিতে বিক্রি করেন আর সন্ধ্যা নামতেই ভাইয়ের সেই ভ্যানগাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন মুকিম। বিক্রি বেশ ভালো হয়। দুই ভাইয়ের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায় চলছে মা-বাবাসহ ৮ জনের সংসার।  

মুকিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বড় ভাই দীর্ঘদিন মানুষের দোকানে চাকরি করতেন। আমিও কলেজ শেষে এক দোকানে কাজ করতাম। কষ্ট করতাম, কিন্তু ঠিকমতো মজুরি পেতাম না। ছিল না স্বাধীনতা। এখন দুইভাই মিলে লোন নিয়ে ভ্যানগাড়ি আর কিছু সবজি কিনে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় ব্যবসায় দিতে পারছি। এতে সংসারের অভাব কিছুটা দূর হয়েছে। আমরাও স্বাধীন।  

এদিকে প্রতিদিনই চকবাজার এলাকায় প্যারেড কর্নারে বসা দোকান থেকে টাকা আদায় করতে দেখা গেছে টহলরত পুলিশ সদস্যদের। নগরীর ক্রাইম জোন বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ হকারদের নিয়ন্ত্রণ করে ছোট-বড় ৯টি গ্রুপ। প্রতি মাসে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়কে ঘিরে ঘটছে সংঘাতও।  

স্থানীয়রা জানান, বাংলাবাজার মোড়, ঢেবার পাড় ও জামতল এলাকায় রয়েছে প্রায় ৭শ ভ্রাম্যমাণ হকার। প্রত্যেক হকারের কাছ থেকে দৈনিক ১৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে নিয়ন্ত্রণকারী গ্রুপগুলো। প্রতিটি গ্রুপের দখলে নির্দিষ্ট ফুটপাতে মালামাল বিক্রি করতে চাইলে অগ্রিম দিতে হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। ফুটপাত ঘেঁষে গড়ে ওঠা দোকান থেকে ৩-৪ হাজার টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়।  

মুরাদপুর মির্জারপুল এলাকায় ভ্যান গাড়িতে বাজার বসে প্রতিদিন বিকালে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় হকারদের থেকে চাঁদা তুলতেন স্থানীয় আরিফ গ্রুপ ও ওয়াহিদ গ্রুপ। চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলছিল দ্বন্দ্ব। এর জের ধরে গত ১৭ নভেম্বর বিকালে মির্জারপুল এলাকায় আরিফকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেন ওয়াহিদ।  

পাঁচলাইশ থানা সূত্রে জানা যায়, ওয়াহিদকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করে আরিফের পরিবার। হত্যার চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ওয়াহিদ এবং তার দুই সহযোগী নয়ন ও আকাশকে গ্রেফতার করা হয়।  

পুলিশ সূত্র জানায়, মির্জারপুল এলাকায় ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদার ভাগ নিয়ে ইতিপূর্বে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। এরপর ফুটপাতের দোকানগুলো তুলে দেয় পুলিশ। কিন্তু সেখানে পুনরায় দোকান বসানো হয়। শুধু ওই এলাকা নয়, যানজট এড়াতে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদের পর আবারও সেখানে দোকান বসছে।

ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে থানার কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানান, রাস্তায় ভ্যানগাড়ি দিয়ে ব্যবসা করার জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। মাঝে মাঝে রাস্তা থেকে ভ্যানগাড়ি ধরা হয়। উচ্ছেদ করার তিন-চারদিন পর আবার যেখানে খুশি সেখানে বসে যায়। বহুদিন ধরে এ অবস্থা চলছে। এসব দোকান থেকে টাকা নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ১৬ মার্চ, ২০২২
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।