ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আমি বেশি লিখে কম ছাপাই: ময়ুখ চৌধুরী

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
আমি বেশি লিখে কম ছাপাই: ময়ুখ চৌধুরী ...

চট্টগ্রাম: কবি, সমালোচক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ময়ুখ চৌধুরী। প্রকৃত নাম আনোয়ারুল আজিম।

নগরের পশ্চিম মাদারবাড়িতে জন্ম ১৯৫০ সালের ২২ অক্টোবর। চার দশক ধরে অধ্যাপনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।

১৯৮০ এর দশক থেকে সাহিত্যকর্মে নিজস্ব কাব্যস্বরের জন্য তিনি বোদ্ধামহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলা কবিতার ত্রিশ দশকের ব্যক্তিবাদী ধারার উত্তরাধিকারী মনে করা হয় তাকে। কাব্যচর্চায় স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ও সময়কালের অভিছাপ প্রকটিত।  

ছাপালেখার ২৩ বছর পর ময়ুখ চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কালো বরফের প্রতিবেশী’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। ‘প্রতীতি’ ও ‘কবিতা’ শিরোনামের দুটি ছোট কাগজ সম্পাদনা করেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। চট্টগ্রাম বইমেলায় তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।  

তার কথায়, আগের বইমেলায় ব্যবস্থাপনা অনেক দুর্বল ছিল। সেটা এবার কাটিয়ে উঠেছে। সময়ও ঠিক রয়েছে। ছোট প্রকাশনীর মেলার স্টলের ক্ষেত্রে কনসিডার করা উচিত ছিল। আমি সবসময় কবি ও সাহিত্যিকের পক্ষে, এখনও তাই।  
 
‘আমি বহু বছর বইমেলায় আসিনি। বহুদিন আগে মুসলিম হলের বইমেলায় গিয়েছিলাম। সেই অভিজ্ঞতাটা সুখকর ছিল না, আমি খুশি হতে পারিনি। কেমন গরীব গরীব ভাব। ব্যবস্থাপনার মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব। প্রশাসনের কোনও সহযোগিতা ছিল না। আমি চাই, মেলার স্টলগুলো আরও বড় হোক, আরও প্রকাশকরা আসুক। আরেকটা জিনিস করা যায়। তাদের নিজেদের বই থাকবে এবং গেস্ট প্রকাশনীর বই থাকবে বিনিময়ের মাধ্যমে। তাহলে লেখকের বই সব জায়গায় পাওয়া যাবে। এই ক্ষেত্রে পাঠক সৃষ্টি হয়। প্রকাশক সমিতি বসে এটা ঠিক করবে। এটা প্রকাশকদের কাছে আমার আবেদন’।  

ময়ুখ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম নগরের লোকসংখ্যা ৬০-৭০ লাখ হয়ে গেছে। ৭০ লাখ নগরবাসীর মধ্যে যে পরিমাণ লোকজন আসছে, সেটা খুব বেশি আশাব্যঞ্জক নয়। বই সবাই কিনবে না, কিনবে শতকরা ২০ থেকে ৩০ জন। বাকি ৭০ জন বইগুলো দেখুক। আমাদের দেশে লেখকরা আছে, প্রকাশকরা তাদের বই প্রকাশ করছে। এইটুকু জানা দরকার। আজকে কিনছে না, আরেকদিন কিনবে। আমাদের অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভাল না। ফলে বই কিনতে গিয়ে নানা রকম হিসাব-নিকাশ করতে হয়। একটা বইয়ের দাম দিয়ে দুই কেজি চাল কিনতে পারবে, সেটাও চিন্তা করতে হবে। লিখার পর বই ছাপায় কারা?  মধ্যবিত্তরা লিখে, তারাই ছাপায়, তারাই পড়ে। মধ্যবিত্তদের কথা চিন্তা করে সবকিছুর আয়োজন করতে হবে। মধ্যবিত্তদের গুরুত্ব ও চাহিদা কি- সেটা চিন্তা করতে হবে।

নিজের প্রকাশিত বই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি সবচেয়ে বেশি লিখে কম ছাপাই। আমার ১২টা বই। তার মধ্যে ১১টা কবিতার, একটা গদ্যের। এখানে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ- সেটা জানি না। সবগুলোই তো ছেলের মতো। কোন ছেলেকে ভালো আর কোনটাকে খারাপ বলবো? আমার বইয়ের মধ্যে তিন থেকে চারটা থাকে সমাজবাদী কবিতা। একটা লেখা আছে এখনও প্রকাশ করিনি। সেটা আজ থেকে ৪০ বছর আগে লিখেছি। আমাদের সমাজে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা নেই। সেটা ৪০ বছর আগে থেকে নেই। আমরা অনেক কথা চাইলেও বলতে পারি না। যেটা বিদেশে বলা যায়’।  

তার মতে, কোনও শিল্পী তৃপ্ত নন। যদি তৃপ্তি হয়ে যায়, লেখাটা বন্ধ বা শেষ। সবসময় অতৃপ্ত থাকতে হবে। মানুষ পানি পান করে বলে কি আর পান করবে না! তারুণ্য না থাকলে কবিতা শিল্পের সঙ্গে সংযোগ হয় না। যারা বয়স্ক ও পরিণত, তাদের চিন্তার জগৎ ভিন্ন। আমি যখন প্রবন্ধ লিখি তখন এক মন কথা বলে। আমার চোখের পিছনে সমালোচক মন কাজ করে। যখন কবিতা লিখি তখন আমার ভিতরে তারুণ্য খেলা করে। মানুষের প্রেমের ভাব যখন উদিত হয়, ঠিক তখনই কবিতা রচনার ভাবটা আসে। কবিতা আসে আবেগ থেকে, প্রবন্ধ আসে বিবেক থেকে। বিবেক হচ্ছে আপনার মা আর বাবা। কারণ তাদেরকে বিবেক থেকে দেখেছেন। আর আপনি যে মেয়েটিকে দেখেছেন- সেটা আবেগ থেকে।

ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে ১৯৭৮ সালের ২০ নভেম্বর কলকাতা যান কবি ময়ুখ চৌধুরী। তাকে যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বেছে নিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে গবেষণা করেছেন।

‘আপনারা যে পেছনে হাতমোড়া, কালো আলখেল্লা পরা একজন রবীন্দ্রনাথ দেখতে পান, সেটা তো রেডিমেড রবীন্দ্রনাথ। আসল রবীন্দ্রনাথ যখন হয়ে উঠছিলেন, তখন ৮৮ জন প্রধান কবি। ওই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি কবিতা লিখেছিলেন, কি অসুবিধা বোধ করেছিলেন, কোথায় প্রতিবন্ধকতা ছিল- সবকিছু তুলে এনেছি। আমি নাম দিয়েছি- ডার্ক পিরিয়ড অব টেগর। ওই সময়কাল নিয়ে কেউ গবেষণা করেনি’।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, ‘আমার গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল রবীন্দ্রনাথের পোয়েটিক ওরিয়েন্টেশন। ওটা পরিমার্জিত করে প্রকাশ করবো। একটা উপন্যাস বের করবো ‘খসড়া সম্পর্ক’। এটা ২০১৪ সালে ইত্তেফাকে প্রকাশ হয়েছিল। কবিতায় প্রকাশ করতে পারছিলাম না বলে অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছে। আরেকটা গল্পের বই বের করবো ‘মাকড়সার ডিম’। মাকড়সার বাচ্চা মাকে যেরকম খেয়ে ফেলে, ওই চিন্তাও আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে ফেলে।

ময়ুখ চৌধুরীর শত্রু কে- এমন প্রশ্নে তার জবাব, ‘আমিই আমাকে শেষ করছি। আমার পরম শত্রুর দেখা পাই আয়নার সামনে। অর্থাৎ, আপনার বড় শত্রু আপনি। আমার কাজ আমি করে যাচ্ছি, কারণ আমার কাজ কেউ করে দেবে না। কাজের মধ্য দিয়েই নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা শত্রুটাকে মিত্র বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি’।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
এমআই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।