ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জাতির কল্যাণে মানবিক ও চেতনাসঞ্চারের বিকল্প নেই: সেলিনা হোসেন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২২
জাতির কল্যাণে মানবিক ও চেতনাসঞ্চারের বিকল্প নেই: সেলিনা হোসেন ...

চট্টগ্রাম: পদ্মবীণা সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন বলেছেন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের বেশি বেশি মানবিকতা ও চেতনাসঞ্চারের চর্চা করতে হবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে মানবিক ও চেতনাবোধের কোনো বিকল্প নেই।

 

তিনি বলেন, সামাজিকভাবে উন্নয়নের জন্য, দিগন্ত বিস্তারের জন্য, যার যা কিছু করার আছে তা যেন মানুষ কাজে লাগায়। জাতির অগ্রগামিতার জন্য, সমাজের মানুষের জন্য ব্যয় করে।

একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার জন্য পদ্মবীণা ফাউন্ডেশনের মতো কাজ অনুসরণীয়। আমাদের যে যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। জীবনের জয়গান গাইতে হবে। সত্যের জয়গান গেয়ে গেয়ে আমাদের প্রজন্মকে আলোকিত করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে পদ্মবীণা সম্মাননা ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।  

দেশ ও জাতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য দেশের বরেণ্য চার ব্যক্তিত্ব পেলেন পদ্মবীণা সম্মাননা ও পদক ২০২২। তাঁরা হলেন খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, বিজ্ঞানলেখক, অনুবাদক ও বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক সুব্রত বড়ুয়া ও বিশিষ্ট কবি, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক সম্পদ বড়ুয়া।  

পদকপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা পদক, উত্তরীয়, ক্রেস্ট, সনদ, নগদ অর্থ ও উপহার সামগ্রী তুলে দেন ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মৃণাল কান্তি বড়ুয়া ও বীণা পানি বড়ুয়া।  

পদ্মবীণা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রকৌশলী মৃণাল কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য দেন পদ্মবীণা সম্মাননা ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কবি ও শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ। স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্যসচিব প্রকৌশলী পুলক কান্তি বড়ুয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইউএসটিসির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, সাহিত্যিক অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম।  
সঞ্চালনায় ছিলেন বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমু। পদকপ্রাপ্ত চার ব্যক্তিত্বের জীবনী পাঠ করেন সমুদ্র বড়ুয়া টিটু। সমন্বয়ক ছিলেন সরিৎ চৌধুরী সাজু।

জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে মৃত্তিকা চৌধুরী ও প্রমা অবন্তির পরিচালনায় বরণনৃত্য পরিবেশিত হয়।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, মানবজীবন খুবই স্বল্প। এই স্বল্প সময়ে মানুষকে দেশ ও সমাজের কল্যাণে কিছু নিদর্শন রেখে যেতে হয়। এ পৃথিবীতে শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নয়, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সুন্দরের চর্চা থাকতে হবে।  

তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছু মানুষের হাতে বেশি সম্পদ আবার কিছু মানুষ নিঃস্ব। ধনী দরিদ্রের এ বৈষম্য কাম্য নয়।

সমাজের প্রতিটি শিশু, প্রতিটি মানুষ যেন মানুষের মর্যাদা পায় সেভাবে দেশটাকে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। আমরা জানি, লেখকরা স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান। এ পৃথিবীকে সুন্দর করার জন্য যে যেভাবে কাজ করে থাকে তাদের চেয়ে শিল্পী-সাহিত্যিকরা অনেক বেশি সুন্দর করে কাজ করেন। তারা বাস্তবের ঊর্ধ্বে উঠে আগামী স্বপ্নের কথা রচনা করেন।

কথাসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া বলেন, সংস্কৃতির কাজ হলো সুন্দরের সাধনা করা, জীবনকে প্রসারিত করা। জীবনের পথচলাকে আনন্দময় করে তোলাই মানুষের কাজ। সমাজের মানুষের জন্য আর্থিক না হোক, কায়িক না হোক, মানসিকভাবে হলেও কাজ করতে পারি। নিজে প্রসারিত হয়ে সমাজকে মানুষের মননকে প্রসারিত করতে হবে। নিজেকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। সব মানুষের এটা চেষ্টা করা উচিত। যারা সমাজে পিছিয়ে আছেন তাদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। এজন্য সততা দরকার। সততা সবচেয়ে বড় জিনিস। অন্যের কল্যাণে সততার ব্যপ্তি ঘটে। সততা মানুষকে মহত্ত্বের দিকে নিয়ে যায়। একটি জীবন থেকে আরেকটি জীবনকে আলোকিত হয়।

কবি, কথাসাহিত্যিক সম্পদ বড়ুয়া ভুটানের হেপিনেস ইনডেক্স-এর কথা তুলে ধরে বলেন, আপনি তখনই খুশি যখন আপনার প্রতিবেশী হাসবে, আপনি তখনই সুখী যখন আপনার পাশের মানুষ সুখী, আপনি তখনই সচ্ছল যখন আপনার প্রতিবেশী দুবেলা ভাত খেতে পারে। মূলত আপনি একা এগিয়ে গেলে হবে না। আপনার চারপাশকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের মানুষের দিকে তাকাতে হবে। যার যা আছে তাই নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।