ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বঙ্গবন্ধুর ভাষণে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক সমান্তরাল: মুনতাসীর মামুন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২২
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক সমান্তরাল: মুনতাসীর মামুন বক্তব্য দেন ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন

চট্টগ্রাম: ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, সাতই মার্চের ভাষণ সূচারুভাবে ব্যবচ্ছেদ করলে এর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক সমান্তরালভাবে চোখে পড়ে। শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু ভাষণটি দেননি।

বাঙালি সেদিন তার মাধ্যমে তাকে কেন্দ্র করে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল। তাই, তার প্রতিটি পদক্ষেপ ও বাণী ছিল বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার নিয়ন্ত্রক।
ভাষণে মূলত চারটি দাবি তোলা হয় মার্শাল ল’ প্রত্যাহার, সেনাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।

সোমবার (৭ মার্চ) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলা মঞ্চে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

তিনি বলেন, ‘দাবি পূরণের পরে আমরা ভেবে দেখবো অ্যাসেম্বলিতে বসব কিনা’ এ ধরনের কথা উচ্চারণ করে একদিকে বঙ্গবন্ধু আলোচনার পথ খোলা রাখলেন এবং ভাষণ পরবর্তী সৃষ্ট স্বায়ত্তশাসন দাবির আন্দোলনের দায়ভার থেকে নিজেকে এবং তার দলকে বাঁচিয়ে নিলেন। বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধু একজন উদারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। ভাষণের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে এই উক্তিতে ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। ’ সরাসরি না বলেও তিনি বাঙালিদের বুঝিয়ে দিলেন তার মনের কথা। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিরোধের নির্দেশনামা। বাঙালির মনের জোর গেল বেড়ে। বাঙালি বুঝে গেল কী করতে হবে সামনের দিনগুলোতে। পাকিস্তানিরাও হতভম্ব হয়ে রইল কিছুক্ষণ। বঙ্গবন্ধুর চাতুর্যময় রাজনৈতিক চালের বিপরীতে তারা চালল নগ্ন একটি চাল। নিরীহ এবং নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হলো। শুরু হলো প্রত্যক্ষ মুক্তিসংগ্রাম।  

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের কথা শুনে হাসে তারা সবচেয়ে বড় হারামজাদা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ বাঙালির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ ছিল এক দক্ষ কৌশলীর সুনিপুণ বক্তব্য। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক। তিনি জনগণ ও শাসকশ্রেণির নাড়ি বুঝতেন। জনগণের সঙ্গে তার যোগাযোগের ক্ষমতা ছিল অনবদ্য। সহজ-সাবলীলভাবে তার কথাগুলো জনগণকে বুঝিয়ে দিতে পারতেন।  

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ছিল প্রথমদিকে ইতিহাস, মাঝের দিকে অত্যাচার ও অন্যায়ের কথা এবং হুঁশিয়ারির সঙ্গে সঙ্গে আলোচনার আহ্বান আর শেষের দিকে জনগণের প্রতি দিকনির্দেশনামূলক কথাবার্তা। শেষের কথাটি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডায়লগ যেটি শোনার জন্যই শ্রোতারা মুখিয়ে ছিলেন। সবশেষে ‘জয় বাংলা' বলে ভাষণটি শেষ করেছেন বঙ্গবন্ধু, যে স্লোগানটি পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের রণধ্বনিতে পরিণত হয়েছিল। আমাদের আনন্দের বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ‘জয় বাংলা' স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করেছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. জসিম উদ্দীন, সচিব খালেদ মাহমুদ, কবি ওমর কায়সার প্রমুখ।

বইমেলায় মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) ‘নারী উৎসব’ অনুষ্ঠিত হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ৭ মার্চ, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।