ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২২
ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে বক্তব্য দেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী

চট্টগ্রাম: নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের ভূমিকা পর্যালোচনা করতে গেলে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান স্মরণ করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দীর্ঘদিন এ দেশের ইতিহাসবিদরা ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওই অমূল্য অবদানকে সচেতনভাবে আড়াল করে রেখেছিল।

একটি স্বার্থান্বেষী মহল স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে কয়েক যুগ ইতিহাস বইগুলোয় ভাষা আন্দোলনের আলোচনায় কোথাও বঙ্গবন্ধুর অবদান স্বীকার করেনি। যদিও ভাষা আন্দোলন সংশ্লিষ্ট ইতিহাসের উৎস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলন সংগঠনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।

 

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সরকার সরকারি অফিসে বাংলা ভাষা প্রচলনের আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেয়। বঙ্গবন্ধুর সরকারের মতোই ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ভাষা আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে জোরালো ভূমিকা পালন করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতায় ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ এবং প্রায় এক দশক পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদেই ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই থেকেই সারা বিশ্বে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।  

শুক্রবার (৪ মার্চ) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলায় লেখক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি লেখকদের বায়ান্নের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানান। ছুটির দিন হওয়ায় বিকেল থেকে বইমেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিভিন্ন স্টলে বিক্রি হয়েছে প্রচুর বই।  

বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন অমর একুশে বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।  

প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি আসাদ মান্নান। আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবি শুকলাল দাশ, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল।

কবি আসাদ মান্নান বলেন, আমাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা বা জাতি গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উপাদানটি হলো রাষ্ট্র ভাষা-আন্দোলন। বাংলাদেশ নামে একটি স্বতন্ত্র, স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।  

তিনি বলেন, লেখক, কবি সাহিত্যিকদের আকাশের মতো উদার ও সমুদ্রের মতো গভীর এবং মানবিক হতে হবে। দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ, জনগণের মালিকানা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে হলে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতিয়ার গোলাবারুদের চেয়ে লেখকদের কলম বেশি ধারালো, তাই প্রত্যেক কবি সাহিত্যিককে সেই ধারালো কলমের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।

রাশেদ রউফ বলেন, বাংলাদেশের সব আন্দোলন সংগ্রামে লেখক, সাহিত্যক ও শিল্পীরা অনন্য ভূমিকা পালন করছেন।  

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে এখনো লেখক, সাহিত্যিকদের ভূমিকা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু বলেন, নতুন লেখক তৈরি করতে বইমেলার আয়োজন অপরিহার্য। বইমেলায় কবি, লেখক ও পাঠকের সম্মিলন ঘটে।  

তিনি চট্টগ্রামের বইমেলার পরিধি আরো বাড়ানোর চিন্তা আছে বলে জানান।

শুকলাল দাশ বলেন, বইমেলার মাধ্যমে একুশের চেতনা উজ্জীবিত হয়। এই মেলা সর্বজনীন হয়েছে। পাঠকের যে আগ্রহ বেড়েছে তা ধরে রাখতে হবে।

কামরুল হাসান বাদল বলেন, মানুষ এ পর্যন্ত যা সৃষ্টি করছে তার মধ্যে বড় সৃষ্টি হলো বই। বই মানুষকে আলোকিত করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।