ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘লাখ টাকার বিনিময়ে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
‘লাখ টাকার বিনিময়ে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে’ ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: ১৯৭৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি পণ্যসামগ্রী পরিবহন শুরু হয়। যা এখন প্রায় ৩২ লাখ টিইইউএস কন্টেইনারে ১১ কোটি টন পণ্যে উন্নীত হয়েছে।

আগামিতে ভারতের ৭টি রাজ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হতে পারে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি আরও বাড়বে।

শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন ও গবেষণা পরিষদ এর সভায় সভাপতির বক্তব্যে কমোডোর (অব.) জোবায়ের আহমদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। সাথে সাথে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই চট্টগ্রাম বন্দরকে দেশের ও আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে উন্নীত করতে হবে। নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন ও গবেষণা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. মাহফুজুর রহমান খানের সঞ্চালনায় সভায় বন্দর উন্নয়ন সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন কমোডোর (অব.) জোবায়ের আহমদ।  

এসব প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- বর্তমানে নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল নির্মাণ কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা। টার্মিনালে স্বচ্ছতার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে যোগ্য ও অভিজ্ঞ টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগ দেওয়া। কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ দ্রুততার সাথে শুরু করা। কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত খননকাজ শুরু করা। মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের কাজ দ্রুত শেষ করে  যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ অপারেটর নিয়োগ দেওয়া। চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকাকে সংযুক্ত করা, যাতে বন্দরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর হয়। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাইজড করা, বিশেষ করে বন্দরের ট্যারিককে সহজতর করে ব্যবহারকারীদের সাথে আর্থিক লেনদেন অনলাইনে করা। নিলামযোগ্য (প্রায় ১০ হাজার) কন্টেইনার বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করে কন্টেইনার জট এড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া। সন্দ্বীপ চ্যানেলে বাড়বকুণ্ড থেকে মিরসরাই পর্যন্ত পানিপথে পরিবাহিত পণ্য (কন্টেইনার ও বাল্ক) খালাসের জন্য জেটি নির্মাণ, যা মিরসরাই বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও ব্যয় সাশ্রয় করবে।  

সভায় আরও বলা হয়, বন্দর থেকে বন্দরমুখি হাজার হাজার ভারি যানবাহন (ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি) চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পার্কিং ও চলাচল করায় যানবাহনের কবলে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে এবং রাস্তা-ঘাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে আধুনিক সুবিধাসম্বলিত ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করে ভোগান্তি থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে পারে। রেল এবং পানিপথ ব্যবহার করে ঢাকায় কন্টেইনার পরিবহন বাড়ানো দরকার। বর্তমানে বছরে রেলের মাধ্যমে ৭০ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার পরিবহন হলেও তা ৫ লাখে উন্নীত করা দরকার। এতে রেলওয়ের আয় বৃদ্ধি এবং হাইওয়ের দুর্ঘটনা এড়ানো এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমবে ও পরিবেশবান্ধব হবে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বোর্ড এর আর্থিক ক্ষমতা ২৫ কোটি টাকা। তাই বন্দরের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নির্মাণ খাতে ও ভারি যন্ত্রপাতি ক্রয় খাতে আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এতে বন্দরের কার্যক্রমের কাজের গতি দ্রুত হবে। বন্দর সীমানার মধ্যে উপকূলীয় সাগর সংলগ্ন তীরসমূহে জেটি নির্মাণ করে পানিপথে কম খরচে পণ্য পরিবহন করা যেতে পারে। বন্দর অভ্যন্তরে প্রতিদিন পণ্যবাহী ৬ হাজার গাড়ির আসা-যাওয়া হয়। কিন্তু জেটির অভ্যন্তরে ভারি যানবাহন চলাচলের কোনও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই। তাই পণ্য খালাসের সময় দুর্ঘটনা বা দেরি হয়ে থাকে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বন্দর সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে একটি সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দরকার, যাতে জেটিতে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আসে।

সভায় জানানো হয়, ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় শ্রমিক-কর্মচারীদের চুক্তিকৃত ও ভোগরত সুযোগ-সুবিধাসমূহ বিলুপ্ত করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে নৌপরিবহন মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে শ্রম মন্ত্রণালয়ে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ডক বন্দর শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে বুকিং সেন্টারের মাধ্যমে বাই-রোটেশন পদ্ধতিতে শ্রমিক কর্মচারীদের বুকিং এর ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ আছে। একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণমূলক ব্যবস্থা ও মজুরি বোর্ড গঠন করে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি নির্ধারণ করা, হাসপাতাল ও বাসস্থানের জন্য ডরমিটরী চালু করা সহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ও ৭ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বার্থ ও টার্মিনাল অপারেটর এবং ডক বন্দর শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পায়নি। উল্টো চুক্তি অনুযায়ী বন্দরের শ্রম শাখার অন্তর্ভুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ না দিয়ে লাখ টাকার বিনিময়ে নাম-পরিচয়বিহীন বহিরাগত লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা বন্দরের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং আই.এস, পি.এস কোড এর সরাসরি লঙ্ঘন।  

সভায় বক্তব্য দেন মোবারক হোসেন, অ্যাডভোকেট মো. মাহফুজুর রহমান খান, ইঞ্জিনিয়ার সলিমুল্লাহ খান, ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, হাজী জহুর আহমদ, সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন, এম নাসিরুল হক, তপন চক্রবর্তী, নাজিমুদ্দিন শ্যামল, জসিম চৌধুরী সবুজ ও কালাম চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।