ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বসন্ত মানুষের মনে উৎসবের রং নিয়ে এসেছে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
বসন্ত মানুষের মনে উৎসবের রং নিয়ে এসেছে ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: করোনার বৈরী সময়েও রক্তলাল পলাশ-শিমুল ফুটেছে। প্রকৃতির নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে বসন্ত।

তাকে বরণ করতে সকাল-বিকাল ভাগ করে চট্টগ্রামজুড়ে ছিল নানা আয়োজন। আবৃত্তির ঝংকার, গানের সুর, নৃত্যের ছন্দে আবাহন জানালেন নানা বয়সী শিল্পীরা।
বসন্তের রঙে রঙিন সবার হৃদয়ে দোলা দিয়ে গেল ভালোবাসা দিবসও। উচ্ছ্বাস-উৎসবের কমতি ছিল না তাদের মননে।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) চত্বরে বোধন আবৃত্তি পরিষদ আয়োজন করে বসন্ত উৎসব। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, ‘আজ পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিন। চট্টগ্রামের মানুষ যেভাবে উৎসবে মেতেছে, তাতে মনে হচ্ছে বসন্ত মানুষের মনে উৎসবের রং নিয়ে এসেছে। গাছে গাছে যেভাবে নতুন পাতা, ফুলের সমাহার হয়েছে, সেভাবে মানুষের মনেও নতুন রং লেগেছে। এই বসন্ত উৎসব দুই বাংলাতেই হচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও হচ্ছে। আরও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দুই বাংলাতেই নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান গেয়ে বসন্তকে উদযাপন করা হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সীমান্ত ভাগ হতে পারে। কিন্তু দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আত্মার, হৃদয়ের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুই দেশেরই জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। আজ বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে, ভারতও কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পৌঁছেছে। ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের মানুষও রক্ত দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দু’দেশের মানুষের মধ্যে রক্তের বন্ধন তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি উন্নত জাতিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ’

বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি আব্দুল হালিম দোভাষের সভাপতিত্বে এবং সহ-সভাপতি প্রবীর পালের সঞ্চালনায় কথামালায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ড. কুন্তল বড়ুয়া, বোধনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অ্যাডভোকেট নারায়ণ প্রসাদ বিশ্বাস।

আলোচনা সভা সঞ্চালনায় ছিলেন প্রবীর পাল। উপস্থিত ছিলেন বোধনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট সুভাষ বরণ চক্রবর্তী, সহ-সভাপতি নারায়ণ প্রসাদ বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল নন্দী, সহসাধারণ সম্পাদক মাইনুল আজম চৌধুরী।  

আনন্দী সঙ্গীত একাডেমির তবলা লহড়া পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।  

বৈকালিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, সাগর নদী পাহাড়বেষ্টিত চট্টগ্রামের মতো মনোরম শহর পৃথিবীতে খুব কম আছে। আমরা চাই চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়ুক। আগামী বছর ডিসি হিলে বোধনের উদ্যোগে এ বসন্ত উৎসব অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে আমি নিজেই উপস্থিত থাকতে চাই। চট্টগ্রামের ডিসি হিল সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।  

বোধনের সভাপতি আবদুল হালিম দোভাষের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল। বোধনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য প্রশান্ত চক্রবর্তী স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রণব চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন বোধনের সাবেক সভাপতি সুজিত রায়, বোধন আবৃত্তি স্কুলের অধ্যক্ষ পারভেজ চৌধুরী।  

দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সংগীত ভবন, অদিতি সঙ্গীত নিকেতন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, কলাবন্তী সঙ্গীত একাডেমি, গীতধ্বনি ও উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী।  

দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ড্যান্স মুভমেন্ট সেন্টার, নৃত্যম একাডেমি, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, নৃত্য নিকেতন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, সঞ্চারি নৃত্যকলা একাডেমি, নটরাজ নৃত্যাঙ্গন একাডেমি, ঘুঙুর নৃত্যকলা একাডেমি, দি স্কুল অব ক্ল্যাসিক্যাল অ্যান্ড ফোক ডান্স, আলোড়ন ডান্স একাডেমি, কৃত্তিকা নৃত্যালয় ও গুরুকুল।  

বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম ও বোধন আবৃত্তি স্কুল চট্টগ্রাম।  

একক আবৃত্তি পরিবেশন করে বোধনের আবৃত্তিশিল্পী রীমা দাশ, তুর্ণা দাম, পৃথুলা চৌধুরী, রাজিউর রহমান বিতান, অঞ্চল চৌধুরী, সুছন্দা ঘোষ, অসীম দাশ, শিমুল নন্দী
এবং আমন্ত্রিত শিল্পী বনকুসুম বড়ুয়া, মো. মুজাহিদুল ইসলাম ও শামীমা ইয়াসমিন।  

শ্রুতিনাটক পরিবেশন করে বোধনের আবৃত্তিশিল্পী সন্দীপন সেন একা ও প্রজ্ঞা পারমিতা সেনগুপ্তা।  

একক সংগীত পরিবেশন করে বোধনের সদস্য দেবলীনা চৌধুরী, নুসরাত রিনি এবং আমন্ত্রিত শিল্পী প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য, শ্রেয়সী রায়, সুবর্ণা দাশ, অগ্নিলা শর্মা দিয়া, প্রান্ত তালুকদার এবং প্রিয়া ভৌমিক।  

আঞ্চলিক গান পরিবেশন করে শিল্পী জয় সেন হিরো ও ববি মনি। একক নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী তিনা পালিত একা।  

বিকেলের অধিবেশন শুরু হয় মঞ্চমুকুট নাট্য সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় নাটক ‘সুধা বাঁচতে চায়’এর মধ্য দিয়ে।  

ঢোলবাদনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাভেদ হোসেন, মাইনুল আজম চৌধুরী, তৈয়বা জহির আরশি, হোসনে আরা তারিন, এ্যানী গুহ, রমিজ বাবু, সেহেলী হাসনাত, সুতপা মজুমদার, তারমিন পুষ্পা, অনিমেষ পালিত, বেনজীর বিনতে শওকাত, ঊর্মি চৌধুরী, মৃত্তিকা চক্রবর্তী ও ঋতুপর্ণা চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।