ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

টিকার আওতায় আসেনি চট্টগ্রামের ৮০ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২২
টিকার আওতায় আসেনি চট্টগ্রামের ৮০ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক  ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগরের ১০ নম্বর রুটে (বহদ্দারহাট-পতেঙ্গা) গাড়ি চালান নেয়ামত উল্লাহ। তার সহকারী হিসেবে আছেন মো. রহিম।

প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ বার আসা যাওয়া করেন এ রুটে। সব সময় থাকেন মানুষের সংস্পর্শে।
কিন্তু তারা দুইজনই এখনও নেননি করোনা টিকা। ফলে নিজের সংক্রমণ ঝুঁকির পাশাপাশি বাড়ছে যাত্রীদের ঝুঁকি।  

টিকা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নেয়ামত উল্লাহ বলেন, সারাদিনই তো গাড়িতে থাকি। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত। সবসময় গাড়িতে থাকলে টিকা নেওয়ার সুযোগ কই? 

শুধু নেয়ামত-রহিম নয়, নগরে চলাচল করা বেশিরভাগ গণপরিবহনের শ্রমিক রয়েছেন করোনা টিকার বাইরে। ফলে টিকার সনদ নিয়ে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরে ছোট-বড় প্রায় ২৭টি সংগঠন রয়েছে শ্রমিক ফেডারেশনের অধীনে। এর মধ্যে ট্রাক লরি, ডাম্প ট্রাক, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা-অটোটেম্পু, বাস-মিনিবাস শ্রমিকদের সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের আওতায় রেজিস্ট্রার্ড সদস্য সংখ্যা ৭৫ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ শ্রমিক করোনার টিকার আওতায় আসলেও ৮০ শতাংশই টিকা নিতে পারেননি।

ফেডারেশনের সভাপতি মো. আবু মুছা বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পর আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মাত্র ১৮ থেকে ২০ শতাংশ শ্রমিক টিকা নিয়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের টিকার আওতায় আনতে হলে স্বাস্থ্য বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে হবে।  

তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা সবসময় গাড়িতে থাকে। স্বাস্থ্য বিভাগ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করলে অবশ্যই ক্যাম্পিং করে  টিকা দেওয়া দরকার।

 অন্যদিকে অটোরিকশা ও অটোটেম্পু শ্রমিক সংগঠনের হিসেব অনুযায়ী, নগরে বাস-ট্রাক ছাড়াও চলাচল করে প্রায় ৩০ হাজার সিএনজি অটোরিকশা।

চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুণের দাবি, নগরে চলাচল করা সিএনজি অটোরিকশার ৫-৬ শতাংশ চালক টিকার আওতায় এসেছে। যা খুবই নগন্য।

এছাড়া, চট্টগ্রাম শহরে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে বলে দাবি করেন চট্টগ্রাম মহানগর রিকশা চালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ৭০ হাজার রিকশা চলাচল করলেও বাস্তবে প্রায় ১ লাখেও বেশি রিকশা চলে মহানগরে। কিন্তু এত রিকশা শ্রমিক কাজ করলেও দুই শতাংশও করোনার টিকার আওতায় আসেনি।  

এর কারণ হিসেবে মো. সবুজ বলেন, গণটিকা দেওয়া হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের মতো করে টিকার কার্ড বিলি করেন। নিম্ন আয়ের মানুষ হওয়ায় কেউ সহজে তাদের সহযোগীতা করেন না। ফলে টিকা আওতায় আসেননি তারা।  

গত ১৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় দেশের সকল জেলা-উপজেলার গণপরিবহনের চালক ও সহকারীদের টিকার সনদ দেখানো আবশ্যিক করা হয়।  

এতে গণপরিবহনের ভ্যাকসিনবিহীন চালক, সুপারভাইজার/কন্ডাক্টর ও হেলপার কাম ক্লিনারদের অবিলম্বে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের আওতায় আনার জন্য স্ব স্ব এলাকার পরিবহন মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডরেশন এর সঙ্গে সমন্বয় করতে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।  

পরিবহন শ্রমিকদের টিকার আওতায় আনার বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শিশুদের টিকাদান কার্যক্রমের পর পরিবহন শ্রমিকদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করবো। ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো আমাদের কাছে তালিকা পাঠালে আমরা টিকাদান কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা নিতে পারবো। আশা করছি সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২২
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।