ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঢাকায় বৈঠকে কি নির্দেশনা পাচ্ছে নগর আ.লীগ ?

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
ঢাকায় বৈঠকে কি নির্দেশনা পাচ্ছে নগর আ.লীগ ? প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: কেন্দ্রের নির্দেশে ১০৬টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। ইউনিট ছাড়িয়ে ওয়ার্ড সম্মেলন করতে গেলে বাঁধে বিপত্তি।

এরই মধ্যে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ও সম্মেলনের বৈধতার প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ‘নালিশ’ নিয়ে যান নগর আ.লীগের একাংশ।  

তবে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দাবি, ‘যারা প্রয়াত মহিউদ্দিন ভাই ও দানু ভাইয়ের কমিটি ভাঙতে চেয়েছিল, আজকে তারাই তৃণমূলের সম্মেলন ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে।

দল নয়, মুজিব প্রেম নয়, ব্যক্তিস্বার্থের কূটকৌশলের কাছে দলীয় স্বকীয়তাকে বিক্রি করার পাঁয়তারা করছে তারা। ’ 

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল রোববার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকায় বৈঠকে বসছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে অভিযোগকারী নেতারা ঢাকায় রওনা হয়েছেন।  
জানা গেছে, এর মধ্যে কেন্দ্রের নির্দেশে ওয়ার্ড কমিটি স্থগিত থাকলেও ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরোয়া পরিবেশে বাকি থাকা ২৩টি ইউনিট সম্মেলন শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে নগর আ.লীগ। গত ১২ জানুয়ারি নগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করে নগর আ.লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে ইউনিট আছে। ইউনিটের পাশাপাশি ২৬ ডিসেম্বর থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ইউনিট সম্মেলন নিয়ে একপক্ষ অভিযোগ করলে কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।  

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালে। সেই সম্মেলনে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সভাপতি এবং কাজী ইনামুল হক দানু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কাজী ইনামুল হক দানু মারা যান। এরপর ওই বছরের ১৪ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে ৭১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি এবং আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মারা যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।  
তখন থেকে নগর কমিটির একাংশের নেতারা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা করে আসছেন। সর্বশেষ ইউনিট সম্মেলনে প্রকাশ্যে বিরোধিতায় না থাকলেও ‘সুবিধাজনক’ সমর্থন ছিল গ্রুপটির। পরে ইউনিট কমিটিতে নিজেদের ঘরনার লোক না আসায় গোপন বৈঠক করে কেন্দ্রে অভিযোগ জানান।  

অভিযোগের প্রশ্নে নগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, নগর আওয়ামী লীগের কোনো সিদ্ধান্তে যদি কারও মনে কোনো প্রশ্ন উঠে তাহলে কার্যকরী কমিটির সভায় তাঁর বক্তব্যে সেটা তুলে ধরবেন। এটাই সংগঠনের নিয়ম, এটাই দলীয় শৃঙ্খলা। কেউ যদি জেগে ঘুমান তাহলে কিছু করার থাকে না। এখানেই আমার কৌতুহল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুসারে নগর আওয়ামী লীগ যখন সবাই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কখন কোথায় ইউনিট কমিটি হবে তা প্রচার করে। এমনকি তা স্থানীয় দৈনিকগুলোতে ফলাও করে তুলে ধরে। তখনও তাদের কোনো প্রকাশ্যে আপত্তি নেই। ইউনিট সম্মেলগুলোতে তাঁদের বেশ কয়েকজনের উপস্থিতিও ছিল। ইউনিট সম্মেলনের শেষের দিকে, এখন কেন অভিযোগ করছেন তা বোধগম্য নয়। দলকে শক্তিশালী করতে সম্মেলনের কোনো বিকল্প নেই। সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্র মেনে, স্বতঃস্ফুর্তভাবে সবার অংশগ্রহণে দুই অধিবেশনে সম্মেলন করে ইউনিট কমিটি করা হয়েছে।  

অভিযোগকারীদের পূর্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আ জ ম নাছির বলেন, আমাদের নগরে অনেকে ওয়ার্ডে কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটি করার সময় যারা আজকে অভিযোগ করছেন তারা কোনো না কোনোভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা কিভাবে সম্মেলন করেছিলেন? এটাই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে। দল যদি দলের মত চললে সমস্যা হয়, তাহলে ভেবে নিতে হবে কারও ব্যক্তিস্বার্থের কূটকৌশলে নিজেদের স্বকীয়তাকে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এখন আমাদের তথ্য ফর্মে একটি কলাম আছে। যেখানে পূর্বে কোনো দল করলে তার নাম ও পদবী উল্লেখ করতে হয়। এটার দেওয়ার পর থেকে অনেকের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। দুষ্টুমি করে মানুষরা আমাকে জানায়। তাদের অনেকে নাকি রাজ্জাকী বাকশাল, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ, চিনি জাফরের দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। অভিযোগকারীরা যে মহিউদ্দিন ভাইয়ের অনুসারি বলে, এখন মহিউদ্দিন ভাইয়ের প্রেমিক হিসেবে উপস্থাপন করছে তারাই তো মহিউদ্দিন ভাই-দানু ভাইয়ের কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। মহিউদ্দিন ভাইকে স্বৈরাচারী, যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে আঁতাতকারী বলতে দ্বিধা করেনি তারা। এখন আবার প্রেমিক বনে যেতেও দেরি নেই তাদের।  

বৈঠকের বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, নগর আওয়ামী লীগের কার্যকারী সভায় যে সিদ্ধান্তের আলোকে ইউনিট সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, সেইভাবে ইউনিট সম্মেলন হয়নি। সংগঠনের নিয়মের বাইরে গিয়ে ইউনিট সম্মেলন করা হয়েছে। সামনে ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনও রয়েছে। সেখানে যাতে অনিয়ম না হয়, সেই বিষয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হয়েছিল।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।