ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

স্বল্পমূল্যের ঝিনুকের বাঁধ রুখতে পারে বড় ক্ষতি

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২১
স্বল্পমূল্যের ঝিনুকের বাঁধ রুখতে পারে বড় ক্ষতি ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: দেশের উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় অভিনব বাঁধ তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। সামুদ্রিক ঝিনুককে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা এই বাঁধের সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে ভবিষ্যতে দেশের উপকূলীয় এলাকাকে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

এছাড়া এই বাঁধ তৈরিতে খরচ কম হওয়ায় আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি একটি টেকসই বাঁধ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

২০১২ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক মোহম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।

তার মতে, ঝিনুক প্রাচীর সমুদ্রের ঢেউকে প্রশমন করতে পারে। ফলে উপকূলে ভাঙনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করবে এ প্রাচীর।

জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক আন্তঃসরকার সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) গবেষণা বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার (৩৯.৩৭ ইঞ্চি) বাড়লে বাংলাদেশের ১৭-২০ শতাংশ স্থলভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে। আর গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫-২০ সেন্টিমিটার (২-৮ ইঞ্চি) হারে ভূমি ডুবে যাচ্ছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলছে। এ অবস্থায় একটি টেকসই উদ্যোগের প্রয়োজন।  

গবেষণায় দেখা গেছে, ঝিনুকের প্রাচীর শুধু ঢেউয়ের আঘাতই ঠেকায় না, বাড়তি কিছু উপকারও এ থেকে পাওয়া যায়। এ প্রাচীর ৩৪ প্রজাতির মাছ, ১১ প্রজাতির কাঁকড়া, ১৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩৫ প্রজাতির শামুক বা খোলস জাতীয় প্রাণির উপযুক্ত আবাসস্থল তৈরিতে সহায়ক। এছাড়া স্থাপন করা রিংয়ের প্রতি বর্গমিটার অংশ থেকে বছরে পাঁচ কেজি করে ঝিনুক জমবে।  

প্রায় কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষক দল দেখতে পায়, রিংবিহীন অংশের তুলনায় রিং বসানো অংশে বাঁধের ভাঙন কমেছে প্রায় ৫৬ শতাংশ। কংক্রিটের গায়ে জমা হওয়া ঝিনুকের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এক বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিল। এতে প্রাচীরের পুরুত্ব বেড়েছে। বছরে প্রাচীরের পুরুত্ব বেড়েছে ২ সেন্টিমিটার।

গবেষক অধ্যাপক মোহম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে উপকূল রক্ষায় ইটের বাঁধ বা জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তা কোনোভাবেই টেকসই হচ্ছে না। প্রতিবছর বর্ষার সময় সমুদ্র যখন উত্তাল থাকে তখন তা ভেঙে যাচ্ছে। তাই আমরা কিছু করার চেষ্টা করেছি। সেখান থেকেই ‘ব্রেক ওয়াটার থিওরি’ আসছে। সমুদ্রের ঢেউকে কিভাবে প্রশমন করা যায় তা ভেবে ইকোলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে কিছু টেকনিক উদ্ভাবন করেছি।

তিনি বলেন, সমুদ্রে কিছু ঝিনুক পাওয়া যায়। তার ব্যবহার করে কিছু একটা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের এই বাঁধটি বলা যায় জীবিত বাঁধ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বাড়বে এই বাঁধের উচ্চতাও তত বাড়বে বলে আমাদের ধারণা।  

একটি কনক্রিটের বাঁধ যখন তৈরি করা হয়, সেটি এ সময়ের জন্য কার্যকরী। ৫-১০ বছর কার্যকরী হবে কিনা তার দেখতে হবে। বাস্তবিক অবস্থাটি উপকূল এলাকায় গেলেই উপলব্ধি করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কুতুবদিয়ায় যে বাঁধ হয়েছে তা এখন পানি উপচে তীরে উঠে আসছে। আমাদের যে প্রযুক্তি সেটি শুধু পানির গতিই রোধ করবে না, ভূমির পরিমাণও বাড়বে।  

অধ্যাপক শাহ নেওয়াজ বলেন, এই বাঁধ বন্যা, সাইক্লোন থেকে রক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু সাইক্লোন হওয়ার কারণে যে ঢেউ সৃষ্টি হয় তা প্রশমন করে ভাঙন থেকে উপকূল রক্ষা করতে পারবে। এছাড়া এ প্রযুক্তি সকল উপকূলের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ ঝিনুক সামুদ্রিক প্রাণি। লবণাক্ত পানিতেই প্রাণিটি জন্মে। সেজন্য যেখানে মিঠা পানি বা বড় বড় নদী রয়েছে সেখানে এ প্রযুক্তি কাজ করবে না।

তার মতে, দেশের বিভিন্ন দ্বীপের যে মেগা প্রজেক্টগুলো চলমান রয়েছে তা নিয়ে এখনই ভেবে দেখা প্রয়োজন। যদিও সরকার কোনও প্রকল্প নেওয়ার আগে সব ধরনের সমীক্ষা চালিয়ে থাকে। হয়তো এ ক্ষেত্রেও করা হয়েছে। তারপরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২১
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।