ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইলিশ আহরণ 

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২১
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইলিশ আহরণ  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। বড়-ছোট ও মাঝারি আকারের ইলিশ ট্রলার থেকে নামানোর পর বৃহৎ মাছের আড়ত ফিশারীঘাটে চলে জমজমাট বিকিকিনি।

কিছু মাছ বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ইলিশ।

তবে খুচরা বাজারে এখনও বড় ইলিশ হাজার টাকার নিচে মিলছে না। পাইকারি বাজারে আকৃতি অনুযায়ী প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হয় ১৫-৩৫ হাজার টাকায়।

বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা। ছোট আকারে ইলিশ কেজিপ্রতি ৫শ-৭শ টাকা। নগরে হালিশহর রাণী রাসমনি ঘাট, কাট্টলী আনন্দবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রুপালি ইলিশ আসছে ঘাটে। সঙ্গে সঙ্গেই কিনে নিচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।


এদিকে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে সোমবার (৪ অক্টোবর) থেকে। মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এসময়ে ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে সব ধরনের মৎস্য আহরণও এসময় নিষিদ্ধ থাকবে।  

ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিতে প্রতি বছর আশ্বিনের পূর্ণিমার (অক্টোবর মাস) আগে ও পরে মোট ২২ দিন দেশের নদী ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়। এরপরও মার্চ-এপ্রিলে পাঁচটি, নভেম্বর-ডিসেম্বরে একটি অভয়াশ্রমে দুই মাস করে এবং গভীর সাগরে ৬৫টি দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।  

জানা যায়, নদীর যে এলাকায় ১০০ মিটার জাল ফেললে ১০টির বেশি ইলিশ ধরা পড়ে এবং সেখানকার পানির গুণগত মান ও জীববৈচিত্র্য ইলিশ বসবাসের উপযোগী হলে সেই এলাকাটি ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

৮০ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের পূর্ণিমায়। তখন ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকে। ডিম ছাড়ার ৭০-৭২ ঘণ্টার মধ্যে জন্ম নেওয়া ইলিশের আকৃতি হয় এক সেন্টিমিটার। মা ও বাচ্চা ইলিশ ৬-৭ মাস পর্যন্ত নদীতে থাকে। এর মধ্যে তিন মাস পর্যন্ত বাচ্চা সঙ্গে রাখে মা ইলিশ।

মার্চ-এপ্রিলে এর আকার হয় ১২ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার, যা জাটকা নামে পরিচিত। তখন এসব ইলিশ মাকে ছেড়ে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে স্বাধীনভাবে ছোটাছুটি করে। তাদের বেড়ে ওঠা নিরাপদ করতে অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে মৎস্য অধিদফতর।

মে মাসের দিকে ওই মাছের আকৃতি হয় ১৮ থেকে ২২ সেন্টিমিটার। তখন তারা নদী ছেড়ে সাগরের দিকে যায়। সেখানে তাদের জীবন আয়ু বৃদ্ধিতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত গভীর সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।  

এ সময়ের মধ্যে ওই ইলিশের পেটে ডিম চলে আসে এবং তারা ডিম ছাড়তে পরের আশ্বিনে আবার নদীর দিকে আসে, যেখানে তার জন্ম হয়েছিল।

চট্টগ্রামে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৯৫৬ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন। এর আগের অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ৫ হাজার ৬৮৩ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন। আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বেড়েছে ১ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন উৎপাদন।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নদীতে জাটকা নিধন বন্ধের ফলে এবং মা ইলিশ রক্ষার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অন্যতম ভূমিকা ইলিশ মাছের।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২১
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।