ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসেনি নগরের ৫৮ শতাংশ গ্রাহক

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১
প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসেনি নগরের ৫৮ শতাংশ গ্রাহক ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: প্রায় তিন বছর আগে শুরু হয়েছিল বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজ। শতভাগ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

মাত্র ৪২ শতাংশ গ্রাহক প্রি-পেইড সুবিধা পাচ্ছেন।  

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শতভাগ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনতে কাজ চলমান।

একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৪ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার পেয়েছেন। আরেকটি প্রকল্পের কাজ চলমান। ইতিমধ্যে প্রায় ৫ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়া হয়েছে। বাকি গ্রাহকদেরও ধীর ধীরে এর আওতায় আনা হচ্ছে।  

নগরের হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা রাসেল ইবনে রফিক। বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের জন্য আবেদন করতে গিয়েও পারছেন না। বিদ্যুৎ অফিসে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও কোনও ফল পাননি।  

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ৫৮ শতাংশ গ্রাহক এখনও প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসেনি। এখন যেসব মিটার আছে সেগুলোর বেশিরভাগ স্থাপন কাজ শেষ হয় প্রায় তিন বছর আগে। এখন ফেজ-২ প্রকল্পের আওতায় নতুন কিছু মিটার সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল হিসেবে পরিচিত পিডিবি-চট্টগ্রাম। এই পাঁচ জেলায় মোট সাড়ে ১১ লাখ ৭৩ হাজার ২২৮ জন গ্রাহক রয়েছেন। এদের মধ্যে ৫ লাখ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছেন। অর্থাৎ, মাত্র ৪২ শতাংশ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের সুবিধা পাচ্ছেন। এই গ্রাহকদের অধিকাংশই চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দা।

নগরের চারটি বিভাগে এসব প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়। এখন সেসব মিটারে ব্যাটারি ড্যামেজ সমস্যা দেখা দিয়েছে। হেক্সিং মিটার প্রতিষ্ঠান যে স্থায়িত্বের কথা বলেছিল, তা হচ্ছে না বলে জানান প্রকৌশলীরা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার সংযোগের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। আমাদের প্রথম প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। আরেকটি প্রকপ্লের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এখন প্রায় ৫ লাখ মিটার আমরা দিয়েছি।  

পিডিবি সূত্র জানায়, পিডিবি চট্টগ্রামের অধীনে সবমিলিয়ে ২১টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে ১২টির অবস্থানই চট্টগ্রাম নগরে। ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর ‘প্রিপেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ডিস্ট্রিবিউশন সাউদার্ন জোন’র আওতায় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, স্টেডিয়াম, পাহাড়তলী ও খুলশী- এই চার বিতরণ বিভাগে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়।

প্রথম পর্যায়ে চারটি বিভাগে ১ লাখ ৩৯ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হয়। এরপর ধাপে ধাপে পাথরঘাটা, কালুরঘাট, ষোলশহর, বাকলিয়া, মাদারবাড়ি, হালিশহর, নিউমুরিং, রামপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের গ্রাহকেরা প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসতে থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে দেড় লাখ এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১ লাখ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার পান। এই ৩ লাখ ৮৯ হাজার প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের শুরুতেই। এরপর মাঝে-মধ্যে কিছু কিছু মিটার স্থাপন করা হয়।  

এসব মিলিয়ে বর্তমানে ৪ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক এই মিটার পেয়েছেন। ১৪০ কোটি টাকায় এসব মিটার কেনা হয়েছে চীন থেকে। সেদেশের ‘হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব মিটার সরবরাহ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, এখন যেসব প্রি-পেইড মিটার আছে সেগুলোর বেশিরভাগেরই স্থাপন কাজ শেষ হয় দুই বছর আগে। এরপর নতুন করে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে কোনও প্রকল্প পায়নি সংস্থাটি। ফলে ম্যানুয়েল মিটার ব্যবহার করা বড় সংখ্যক গ্রাহকের ভোগান্তি লেগেই আছে।

প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার বাড়লে বকেয়াও কমে যাবে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে পিডিবির প্রায় ২৩৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। সেসবের সিংহভাগই ম্যানুয়েল গ্রাহকের কাছ থেকে পাওনা। ৫৮ শতাংশ গ্রাহক আওতার বাইরে। পুরো অংশ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হলে বকেয়া শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।

পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু বাংলানিউজকে বলেন, প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়া হয়েছে। বাকি গ্রাহকদেরও প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা গেলে বিদ্যুৎ চুরি, অপচয় ও বকেয়া কমে যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১ 
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।