ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে প্রবাসী স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে প্রবাসী স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা ...

চট্টগ্রাম: ভ্রূণ হত্যার মাধ্যমে মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী স্বামী সফিউল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার স্ত্রী সাজু আক্তার। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন এবং তদন্তের জন্য চান্দগাঁও থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ।  

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া থানার খিলমোগল খামারিপাড়া হোসনাবাদ এলাকার কাজী সফিউল আলমের সঙ্গে পারিবারিক পছন্দেই বিয়ে হয় উত্তর পদুয়া পশ্চিম খুরুশিয়ার সাজু আক্তারের।

বিয়ের কিছু দিন পরই জানা যায় স্বামীর সঙ্গে পাশের গ্রামের এক নারীর প্রেমের সম্পর্ক  রয়েছে। বিয়ের এক মাস পরে বিদেশ পাড়ি দেন স্বামী। বিদেশ থেকে আসা-যাওয়ার মাঝে স্ত্রী সাজু সন্তান সম্ভাবা হয়ে পড়লে সফিউল আলমের পরামর্শে মা নুর আয়েশা এবং বোন তাসলিমা ও পারভিন মিলে চন্দ্রঘোনায় ডা. পাপড়ি দাশের কাছে নিয়ে যান সাজু আক্তারকে। সেখানে চিকিৎসককে গর্ভপাত করানোর ওষুধ দেওয়ার কথা বললে চিকিৎসক প্রথমে রাজি হননি। মানুষ কতো কষ্ট করে একটা সন্তান পাওয়ার জন্য। আর গর্ভে সন্তান আসার পর সেটা নষ্ট করতে গেলে প্রসূতি মায়ের অনেক সময় জীবনের ঝুঁকিও থাকে। তারপরও পরিবারের লোকজন নিজেদের নাম লিখে দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ এনে রাতে সাজু আক্তারকে একটি ওষুধ খাওয়ালে তার শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে।  

পরদিন থেকে বমি ও রক্তক্ষরণ শুরু হলে আবারো নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক দ্রুত ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য বললেও পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি নিয়ে আসে। অসুস্থ অবস্থাতেই জ্বরের ওষুধের কথা বলে আবারো সাজু আক্তারকে ভ্রূণ হত্যার ওষুধ খাওয়ানো হয়। এভাবে তার প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হয়। এখানেই শেষ নয়। বিষয়টি পরিবারের কাউকে না জানানোর জন্য চাপ দিতে থাকে সফিউল আলমের পরিবার। এভাবে বারে বারে ভ্রূণ হত্যার ঘটনা ঘটায় সফিউলের পরিবারের লোকজন। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে সাজু আক্তার ২০২০ সালের জুলাই মাসে তার বোনের বাসা বহদ্দারহাটের ফরিদার পাড়ায় চলে আসেন। ইতোমধ্যে ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট সাজুর স্বামী সফিউল বিদেশ থেকে দেশে এসে সাজুর বোনের বাসায় ওঠেন। সাজুকে আগের সব কিছু ভুলে গিয়ে আবারো নতুন করে সব শুরু করার জন্য বললে সাজুও সব ভুলে আবার নতুন জীবন শুরুর আশায় আগের সব ভুলে যান। একপর্যায়ে আবারো সন্তান সম্ভাবা হন সাজু। এবারও আগের মতোই সফিউল তার স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলার কথা বললে সাজু আর তাতে রাজি হননি। এতেই বাধে বিপত্তি। সাজুর ওপর নেমে আসে আবারো নির্যাতন। স্বামীর অত্যাচারে অসুস্থ্ হয়ে পড়া স্ত্রীকে তালাকের হুমকি দিয়ে স্বামী এবার ঘর থেকে বেরিয়ে যান। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। অবশেষে আইনের আশ্রয় নেন নির্যাতিতা অসহায় নারী সাজু আক্তার।

গোলাম মাওলা মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, ভ্রূণ হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ আমাদের সমাজে হরহামেশাই ঘটার কথা শোনা যায়। এ নিয়ে মাঝে মাঝে অভিযানও চলে ক্লিনিকগুলোতে। তাতে বন্ধ হয়নি ভ্রূণ হত্যার মতো গুরুতর অপরাপ। অপরাধীরা অপরাধ করেও বার বার পার পেয়ে যায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি একজন ভুক্তভোগী নারীর মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতের নজরে আনা হয়েছে যেন এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর কেউ ঘটাতে সাহস না পায়।

তিনি বলেন, মাতৃত্বের স্বাদ পূর্ণ হয় সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে। একজন নারীর আজন্ম স্বপ্ন থাকে একটি সুস্থ্ সবল শিশুর মা হওয়ার। বিবাহিত জীবনে মা হওয়ার জন্য কত প্রচেষ্টা থাকে প্রতিটি স্বামী-স্ত্রীর। অথচ সন্তান সম্ভাবা হয়েও স্বামী আর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অসহযোগিতায় মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হন রাঙ্গুনিয়ার উত্তর পদুয়া পশ্চিম খুরুশিয়ার সাজু আক্তার। কখনো জ্বর, সর্দির ওষুধ কখনো বা ভিটামিন ওষুধের নাম করে ওই নারীকে ভ্রূণ হত্যার ওষুধ খাইয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করতেন তারা। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে নিজেরা দায়িত্ব নিয়েও ওই নারীর গর্ভপাত করিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বারে বারে সন্তান সম্ভাবা হয়েও সন্তান বঞ্চিত হওয়া ওই নারী। সর্বশেষ ওই নারীকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য তার প্রবাসী স্বামী চাপ দিলে সন্তান নষ্ট করতে অস্বীকার করেন সাজু আক্তার। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে তালাকের হুমকি দেন স্বামী। করেন শারীরিক, মানসিক নির্যাতনও। ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মোবাইল ফোনও বন্ধ করে দেন সাজু আক্তারের স্বামী সফিউল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad