চট্টগ্রাম: প্রথম দেখায় মনে হবে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা লেখা। কিন্তু বাস্তবে তা নয়।
ডান হাতের তিন আঙুল বৃদ্ধাঙ্গুলি-তর্জনী-মধ্যমার ফাঁকে জড়িয়ে রাখা ফাউন্টেন পেন দিয়ে গভীর দৃষ্টিতে লিখছেন তিনি। কলমের মুখ বেয়ে মুক্তোর দানার মতো ঝরে পড়ছে এক একটি অক্ষর। এসব অক্ষর পাশাপাশি বসে শৈল্পিক সৌন্দর্য নিয়ে হয়ে উঠছে এক একটি শব্দ-শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, পঠিত বিষয়ের নাম কিংবা অর্জিত ফলাফল। এটিই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট শাখায় কর্মরত সৈয়দ শফিউল আলম মুকুল সনদপত্র লিখছেন ৬ বছর ধরে। পথটা দেখিয়েছেন বাবা নাছির উদ্দিন, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাতে লিখতেন সনদপত্র। বাবার মৃত্যুতে এখন ছেলে লিখছেন।
২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে ৭ হাজার ১৯৪ জন গ্র্যাজুয়েটের জন্য তৈরি করতে হয়েছে সনদপত্র। মুকুল এসব সনদ লিখতে বাবাকে সহযোগিতা করেছেন। মুকুলের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। তার দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে সনদ লেখার কাজে।
তিনি সনদপত্র নিজ হাতেই লিখেন নির্ভুলভাবে। প্রথমদিকে দু’একটি ভুল হলেও এখন আর হয় না। এই সনদপত্র লিখতে গিয়ে তার তৈরি হয়েছে এক অন্যরকম মায়া। তাই তিনি সনদপত্র লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বোধ করেন। জেল কলমে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০টি সনদপত্র লিখতে হয় তার। অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রি, মেডিক্যাল কলেজের সনদ, নার্সিং সার্টিফিকেট, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, এমবিএ ডিগ্রির সনদও লিখেন তিনি।
মুকুল বাংলানিউজকে বলেন, হাতের লেখার প্রতি ছোট থেকেই আলাদা টান ছিল। আমাদের সময় দোয়াত-কালি দিয়ে লিখতে হতো। যার কারণে লেখার সময় সচেতন থাকতে হতো বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট শাখায় প্রায় ৬ বছর ধরে আছি। প্রতিদিনই ৫০টা বা তারও বেশি সার্টিফিকেট লিখতে হচ্ছে। দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট লিখতে পারছি বলে ভালোই লাগছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট শাখার প্রধান মো. সাইফুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, মুকুলের বাবা নাছির উদ্দিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র হাতে লিখতেন। পরে তার মৃত্যুতে মুকুল সে কাজের দায়িত্ব নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
বিই/এসি/টিসি