ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীরা: পরীক্ষায় বসে জানা উত্তর করছেন ভুল

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীরা: পরীক্ষায় বসে জানা উত্তর করছেন ভুল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চার ঘণ্টার পরীক্ষা। দুই ঘণ্টা না যেতেই বের হয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রশ্ন কমন পড়লেও লিখতে পারছেন না অনেকে। মাথায় শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু কলমে সেটা লেখা যাচ্ছে না।
অথবা ঠিক এর বিপরীত। কলম নিয়ে বসে আছে, কিন্তু মাথায় কোনো শব্দ আসছে না। শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই পরীক্ষার হল ছেড়ে বের হয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।  

এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে ফিরে কোনো ক্লাস বা টিউটোরিয়াল ছাড়াই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। ফলে পরীক্ষার প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও লিখতে পারছেন না অনেকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পারাজ হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন পড়েছে। সুন্দর করে লেখাও শুরু করি। কিন্তু একপর্যায়ে আমার কলম আর চলছে না। আমি কি নিয়ে লিখছি তাই মনে করতে পারছিনা। প্রায় ১০ মিনিট আমি ঘড়ির কাটা ঘুরতে দেখছি, কিন্তু আমার মাথায় একটা শব্দও আসছেনা যে আমি খাতায় লিখবো। জীবনের সবচেয়ে খারাপ একটা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করবো?

এ শিক্ষার্থী বলেন, শেষ পর্যন্ত কোনমতে লিখে আসলাম। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি তখন। একটু পর দেখি আমাদের হলের অনেকেই দুইঘণ্টা পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। পরে শুনলাম সবার একই অবস্থা।  

বাপ্পারাজ হাওলাদার বলেন, আমাদের যেহেতু একটা পরীক্ষা হয়ে গেছে, আশাকরি বাকিগুলোতে কিছুটা হলেও আমরা সহজ এবং স্বাভাবিক হতে পারবো। কিন্তু যারা এখনও শুরু করেননি তারা অবশ্যই এমন সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে।  

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন পড়ালেখার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত নেই শিক্ষার্থীরা। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, দীর্ঘদিন চর্চার মধ্যে না থাকলে আমরা আমাদের স্বাভাবিক গতিধারা হারিয়ে ফেলি।  অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে। এটি অনেকটা কাঁচাঘুম থেকে আচমকা জাগিয়ে তোলার মতো। যা ব্যক্তিকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অনেক শিক্ষার্থী আছে তাদের প্রস্তুতি হয়তো কম ছিলো বলেই তারা পরীক্ষা ভালোভাবে দিতে পারছে না। তবে আরেকটা বিষয়ও হতে পারে, ক্লাসগুলো অনলাইনে হওয়াতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার আন্তঃসংযোগটা সেভাবে হয়নি। তাই অনেকেই পড়াগুলো বুঝে নিতে পারেনি।  

তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের একটা গ্যাপের কারণেও শিক্ষার্থীদের অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার আগে যদি মাসখানেক শিক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস বা অনুশীলনের মধ্যে রাখা যেত, তাহলে এ সমস্যাটা অনেকাংশেই কমে যেত।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
এমএ/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad