চট্টগ্রাম: ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় ও পরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে টেকনাফে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মাধ্যমে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে অভিযোগপত্রের ব্যাপারে মামলার বাদী এসএম জসিম উদ্দীনের নারাজি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজার আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে মামলাটির যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল, সেখানে ঘটনা সর্ম্পকে বাদীর নিকট আত্মীয়রা ঘটনার সমর্থনে সাক্ষী প্রদান করলেও নিরপেক্ষ সাক্ষীরা ঘটনার সমর্থনে সাক্ষী প্রদান করেনি। নিরপক্ষ সাক্ষীরা ঘটনার সমর্থনে সাক্ষী প্রদান করেনি বলে ঘটনার সম্পর্কে সত্যতা পাননি বলে উল্লেখ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের তৎকালীন এসআই লিয়াকত আলী, কুমিল্লা দাউদকান্দি থানার তৎকালীন এসআই নজরুল ও এসআই হান্নান। অপর চার অভিযুক্ত হলেন- এসএম সাহাবুদ্দিন, বিষ্ণুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য ও জিয়াউর রহমান।
গত ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে মামলার এজাহারে জসিম উদ্দীন মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়ে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছিল। অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয় সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন এসআই সন্তোষ কুমার, পতেঙ্গা থানার তৎকালীন এসআই কামরুল, সদরঘাট থানার তৎকালীন এসআই তালাত মাহমুদ, পতেঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি প্রণব চৌধুরী, সদরঘাট থানার তৎকালীন ওসি মর্জিনা বেগম এবং গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার।
বাদির আইনজীবী জুয়েল দাশ বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগপত্রের ব্যাপারে বাদী নারাজি আবেদন দেয়ায় পুনরায় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন আদালত। মামলাটি শুনানি শেষে নথি পর্যালোচনা করে বিকেলে আদেশ দেবেন বলেছেন আদালত। বিকেলে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্টোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, সাগরিকা এলাকায় গত ২০১৩ সালে কারখানায় চুরির ঘটনায় মালিক এসএম জসিম উদ্দীন আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিবির তৎকালীন এস আই লিয়াকত আলী। ২০১৪ সালের ১৪ জুন তদন্ত কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জসিম উদ্দীনকে তার অফিসে ডেকে নেন। এর আগেই মামলা সঠিকভাবে তদন্তের জন্য তার কাছ থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার জসিম উদ্দীনকে অফিসে ডেকে নিয়ে আসামিপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য চাপ দেন। জসিম উদ্দীন রাজি না হয়ে যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে তাকে আটক করে চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। চোখ খোলার পর দেখেন তিনি পতেঙ্গা থানায় আছেন। সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে তাকে মারধর করে। পরে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। আড়াই লাখ টাকা সংগ্রহ করে তাদের হাতে দেন জসিম উদ্দীন। টাকা দেওয়ার পরও জসিম উদ্দীনকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার একটি ভুয়া পরোয়ানার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় ছয় মাস জেল খেটে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২১
এমআই/টিসি