ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধ্বংস করে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ আত্মঘাতী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২১
শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধ্বংস করে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ আত্মঘাতী মুক্তিযুদ্ধের এ রকম অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে সিআরবিতে প্রস্তাবিত হাসপাতাল এলাকায়

চট্টগ্রাম: মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের ওপর এবং চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের 'আত্মঘাতী' সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের ২১ সন্তান।  

বুধবার (২৮ জুলাই) যৌথ বিবৃতিতে ২১ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে পরিচালিত করছেন।

তাঁর সুশাসনকে কলঙ্কিত করতে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু আমলা রেলওয়ের সরকারি জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের দুঃসাহস দেখিয়েছেন। চট্টগ্রামের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের কঠোর বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রকল্পটি বাতিলের কোনো ঘোষণা এখনো দেওয়া হয়নি।
 

বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ও প্রকৃতি ধ্বংস করে সিআরবি নয়, পাহাড়তলী, কুমিরা কিংবা অন্য যেকোনো জায়গায় হাসপাতালটি নির্মাণ করা যেতে পারে। আমরা হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে নই, জায়গার বিরুদ্ধে। বন্দরে হাসপাতাল নির্মাণের জায়গা পরিদর্শন করেছেন দেবী শেঠীর মতো খ্যাতিমান চিকিৎসক। সেই জায়গাটিও হাসপাতাল নির্মাণের উপযুক্ত জায়গা।

বিবৃতিদাতা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা হলেন- চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটি সদস্য মাহবুব উর রহমান রুহেল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি দীপংকর চৌধুরী কাজল, অবিনাশী ৭১ সেক্রেটারি পারভেজ মান্নান, স্লোগান সম্পাদক মোহাম্মদ জহির, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শওকত বাঙালি, মহিলা শ্রমিক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুবা আহসান চৌধুরী, জহুর আহমদ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পরিচালক শরফুদ্দীন চৌধুরী রাজু, রহমত উল্যাহ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি হাবিব উল্যাহ চৌধুরী ভাস্কর, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সেক্রেটারি এসএম ফরহাদ আলী, দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি আবু তৈয়ব সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগ নেতা তাজিব সুলতান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু, সদস্যসচিব কাজী মুহাম্মদ রাজিশ ইমরান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম ভেটেরেনারি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার’স সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ আরিফ প্রমুখ।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, সিআরবিতে এক হাসপাতালেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সমাধিস্থলসহ বহু স্মৃতিচিহ্ন। হাসপাতাল তৈরির জন্য যে ৬ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রয়েছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাকসু) জিএস আবদুর রবের সমাধি, শহীদ শেখ নজির আহাম্মদের সমাধিস্থল। হাসপাতাল হলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডবল এমএ মনোয়ার হোসেন, বিমল সিং, ফখরুল আলম, মো. সিরাজউদ্দিন, আলী নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন, নুরন্নবী চৌধুরী ও গঙ্গারামের স্মৃতিস্তম্ভও বিলীন হয়ে যাবে। শহীদ আবদুর রবের নামে থাকা রেলওয়ে কলোনিটিও ধ্বংস হয়ে যাবে। একই সঙ্গে হারিয়ে যাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রফিকের তৎকালীন কমান্ড অফিস কাঠের বাংলোটি। মুক্তিযুদ্ধের এ রকম অসংখ্য স্মৃতিবিজড়িত স্থান বাঁচাতে সিআরবিতে আমরা হাসপাতাল চাই না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২১
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।