চট্টগ্রাম: টানা ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের পর চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। এতে বদলে গেছে অনেক মানুষের জীবনযাত্রা।
নগরের চট্টেশ্বরী মোড়। কালো প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরা এক ভদ্রলোক বসে আছেন। কোনো মানুষ হেঁটে গেলেই হাত বাড়িয়ে ভিক্ষা করছেন। লকডাউনে কোথাও কাজ না পেয়ে সংসারের দৈনন্দিন খরচ জোগাতে রাস্তায় নেমেছেন মোহাম্মদ মাসুম। তিনি আগে কাজ করতেন রাজমিস্ত্রির।
মনোয়ারা বেগম মনি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। তিন মেয়ের সংসার। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। কঠোর লকডাউনে কারো বাড়িতে কাজ করতে যেতে পারেন না। যে বাড়িতে নিয়মিত কাজ করতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তারাও কাজে যেতে নিষেধ করেছেন। তাই বাধ্য হয়ে মনোয়ারা বেগমও করছেন ভিক্ষা।
জানতে চাইলে মোহাম্মদ মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ করোনার কারণে সব বন্ধ হয়ে যাবে কল্পনাও করিনি। আর কাজ করে যে টাকাগুলো পাই সেগুলো দিনেই খরচ হয়ে যেত। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ। অনেকের কাছ থেকে ধার দেনা করেছি। কিন্তু আর পারছি না। তাই ভিক্ষা করছি।
মনোয়ারা বেগম মনি বলেন, করোনার কারণে মানুষের বাড়িতে কাজ করতে বারণ করছে। কোনো কাজ নেই। কোনো সহযোগিতাও নেই। মানুষ দিলে খাই, না দিলে উপোস থাকতে হয়।
কঠোর বিধি নিষেধে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ায় চাকরি হারিয়ে বৃদ্ধ মা-বাবার খরচ জোগাতে আনোয়ার হোসেন ধরেছেন রিকশার হাতল। তারপরও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বেলা ২টা। নগরের কাজীর দেউড়ি শিশুপার্কের পাশেই ভিক্ষা করছিলেন বৃদ্ধ লতিফ মিয়া। এর আগে তিনি রিকশা চালাতেন। বয়সের ভারে এখন রিকশাও চালাতে পারেন না।
তবে শুধু লতিফ মিয়া নন, তার মতো একই অবস্থা হাজারো মানুষের। বিশেষ করে করোনা আর লকডাউনে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অনেকেই।
সরকার ঘোষিত ২ সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধি-নিষেধের ৫ম দিন ছিল মঙ্গলবার। করোনার সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। লকডাউনের শুরু থেকেই বিভিন্ন জায়গায় টহল দিতে দেখা গেছে তাদের। নগরের বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্টে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
কয়েকদিনের তুলনায় সড়কে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। তবে চেকপোস্টে কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো।
দুপুরে মুরাদপুর, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, লালখান বাজার, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, আগ্রাবাদ এলাকায় দেখা গেছে রিকশা আর ভ্যানে করে মানুষ নিজের গন্তব্যে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। রিকশা ও ভ্যানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িও দেখা গেছে। সকাল থেকে নগরের ২ নম্বর গেইট, অক্সিজেন, নতুনপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকাতেও এমন চিত্র দেখা গেছে।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে গ্রেফতার ও জরিমানা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখানো ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তল্লাশির সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে, তারা তাদের গন্তব্যে বা কর্মস্থলে যেতে পারছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একজন মানুষও যাতে কষ্টে না থাকে। সেজন্য আমরা কাজ করছি। এ রকম কেউ কষ্টে থাকলে আমরা ৩৩৩ নম্বরে যোগাযোগের ব্যবস্থা রেখেছি। যারা সাহায্য চাইবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের কাছে সহযোগিতা পৌঁছে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২১
এমএম/টিসি