ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আড়াই বছরের নিরন্তর পরিশ্রমের এক পল্লী ‘মনাই ত্রিপুরা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২১
আড়াই বছরের নিরন্তর পরিশ্রমের এক পল্লী ‘মনাই ত্রিপুরা’

চট্টগ্রাম: হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পশ্চিমে ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন। সে ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক নিভৃত পল্লীর নাম ‘মনাই ত্রিপুরা’।

ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ৫৫ পরিবারের বসবাস এই পল্লীতে ।  

যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করে আসা জনগণ কখনো পায়নি উন্নয়নের ছোঁয়া।

স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের ব্যাপারে কোন ধারণাই ছিল না এ পল্লীর বাসিন্দাদের। সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা ছিল না। বিদ্যুতের আলো এই পল্লীর আধিবাসিদের জন্য ছিল স্বপ্নের মত।  

যোগাযোগ সমস্যা, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, সুপেয় পানির অভাব, স্যানিটেশন সমস্যা, পুষ্টিহীনতা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অসচেতনা ও লেখাপড়ার পর্যাপ্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন তারা।
২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হাটহাজারি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করেই অবহেলিত এই পল্লীর কথা জানতে পারেন রুহুল আমিন। ওই সময়েই এ পল্লীর বাসিন্দাদের কাছে শহরের সরকারি সুবিধাসমূহ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ শ্লোগানে রচিত হয় দৃষ্টির আড়ালে থাকা এই পল্লীর বদলে যাওয়ার গল্প। ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে ত্রিপুরা পল্লীর যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ সামগ্রীক চিত্র।  

এই সরকারি কর্মকর্তা দুর্গম এ পল্লীকে নিয়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার ক্ষেতের আইলকে প্রথমে মাটির সড়ক ও পরবর্তীতে হেরিং বোন বন্ড সড়কে রুপান্তরিত করেন। ফলে দীর্ঘ দিন পরে মনাই ত্রিপুরা পাড়ার গায়ে লেগে থাকা ‘দুর্গম’ শব্দটি দূর হয়। সরাসরি গাড়ি, সিএনজি কিংবা রিক্সায় চড়েই নিজ বাড়িতে যেতে পারছেন পল্লীর বাসিন্দারা। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে কৃষি কাজে আগ্রহ এবং উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে স্থানীয়দের।  

পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠা ত্রিপুরা পাড়ায় ছিল না বিদ্যুৎ সুবিধা। মোবাইল চার্জ দিতে হলেও যেতে হতো নিকটবর্তী বাজারে। ঘন্টায় ১০ টাকা খরচে দিতে হতো মোবাইল চার্জ। শুরুর দিকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে ৫৫ পরিবারে দেওয়া হয় সৌর বিদ্যুৎ। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের সেবার আওতায়ও এসেছে এই পল্লী, অন্ধকার পল্লীটি এখন আধুনিক বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত।

তাছাড়া মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা ১২ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দুর্যোগ সহনীয় ঘর। গ্রীষ্মকালে মনাই ত্রিপুরা পাড়ার প্রধান সমস্যার নাম ছিল পানি। পাহাড়ি ছড়া বেয়ে নেমে আসা ঝিরিঝিরি পানিই ছিল তাদের সুপেয় পানির একমাত্র উৎস। পানির সমস্যা দূরীকরণে স্থাপন করা হয় একাধিক গভীর নলকূপ। পানি নিয়ে এখন আর ভাবতে হয় না ত্রিপুরা বাসীকে। এছাড়া নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট।  

মনাই ত্রিপুরা পল্লীর বাসিন্দা শচীন ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, এ পল্লীতে আমাদের বসবাস অনেক আগে থেকেই। আমার দাদার দাদাও এখানে বসবাস করেছেন। অনেক সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা এসে নানান সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলে চলে যায় আর আসেনা।  

তিনি আরও বলেন, কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে এ পল্লীর ৪ শিশু মারা যায়। তখন সদ্য দায়িত্ব নেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রুহুল আমিন। এ খবর শুনে তিনি সরাসরি এ পল্লী পরিদর্শন করেন এবং আমাদের বার্তা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা সে আশ্বাসের সুফল পাই। ইউএনও রুহুল আমিনের এ অল্প সময়ে আমাদের এ পল্লী আধুনিকতার ছোঁয়া পায়। এখন আমরা সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২১
এমএম/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।