চট্টগ্রাম: প্রতিবছরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয় কাঁচা চামড়ার বাজার দর। আড়তদার থেকে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার দাম নির্ধারিত থাকলেও মৌসুমি ব্যবসায়ী থেকে আড়তদার এবং মাঠ পর্যায় থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কত দামে চামড়া কিনবেন- এ নিয়ে নেই কোনো নির্দেশনা।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়া কিনতে হবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। গত বছর এই দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
এছাড়া সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবছর খাসির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন দাম নির্ধারণ শুধু ট্যানারি মালিকদের বাঁচানোর জন্যই, বলছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য এ দাম নির্ধারণ কোনো সুফল বয়ে আনবে না বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
কত দামে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া ক্রয় করা হবে, জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার বাইরে সরকার লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কাঁচা চামড়া লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে প্রতি বর্গফুটে ১২ থেকে ১৫ টাকা খরচ পড়ে। সুতরাং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনতে হলে নির্ধারিত দামের ১২ থেকে ১৫ টাকা কমে কিনতে হবে।
সরকারের এমন দাম নির্ধারণে সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না মাঠ পর্যায়ে চামড়া বিক্রি করা সাধারণ মানুষ। আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিবর্গ ফুট চামড়া ২০-২২ টাকা দরে ক্রয় করলে মাঠ পর্যায়ে এই চামড়ার দাম দাঁড়াবে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। অর্থাৎ ১ থেকে দেড় লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়ার দাম হতে পারে মাত্র ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর চামড়ার ব্যবসা করতে গিয়ে হাজার হাজার মৌসুমি ব্যবসায়ী মূলধন হারিয়ে পথে বসছে। অথচ তাদের কথা চিন্তা না করে ট্যানারি মালিকদের বাঁচাতে সরকারের এমন দাম নির্ধারণ। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ না করলে তা ট্যানারি পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছাবে?
প্রতিবছর চামড়ার একটি বড় অংশের যোগান আসে কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। ট্যানারিগুলোও কোরবানিকে কেন্দ্র করে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে। চট্টগ্রামের একমাত্র ট্যানারি ‘রিফ লেদার’ এবছর ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ বর্গফুট চামড়া কোরবানি কেন্দ্রিক জবাই করা পশু থেকে সংগ্রহ করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় বিভাগের পরিচালক মোখলেছুর রহমান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছরই আমাদের একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে। সে অনুযায়ী আমরা চামড়া সংগ্রহ করে থাকি। চট্টগ্রামে একমাত্র ট্যানারি হিসেবে আমরা এখনও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। কোরবানিকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও আমাদের চামড়ার যোগানের একটি বড় অংশই কোরবানির জবাই করা পশুর চামড়া থেকে আসে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ড আমাদের কাছে চাহিদা পাঠাচ্ছে। গত কয়েকবছর ধরে বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হচ্ছে, তা রোধ করা জরুরি। এত মূল্যবান একটি পণ্য এভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২১
এমএম/এসি/টিসি