চট্টগ্রাম: করোনা মোকাবেলার কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) ১২৬ জন চিকিৎসককে বদলির আদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। একসঙ্গে এতো চিকিৎসক বদলিতে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের চিকিৎসক নেতারা।
গত সোমবার (৫ জুলাই) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব জাকিয়া পারভীন স্বাক্ষরিত একাধিক পরিপত্রের মাধ্যমে এ আদেশ দেওয়া হয়।
পরিপত্র অনুযায়ী, চমেক হাসপাতালের ১৭ চিকিৎসককে ফেনী জেলা হাসপাতালে, ৭ জনকে দাগনভুঁইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ৬০ জনকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে, ১৬ জনকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি), ৮ জনকে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে , ১৮ জনকে খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, তালিকায় উল্লেখিত চিকিৎসকগণ আগামী ৭ জুলাই পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় ৮ জুলাই থেকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে।
এছাড়া পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যপারে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আখতার বাংলানিউজকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের ১২৬ চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। এক সঙ্গে এতজন চিকিৎসকের বদলিতে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা এবং মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবহত হবে। অন্যরোগের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হবে প্রতিষ্ঠানকে। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
চিকিৎসক বদলির বিষয়ে চমেক হাসপাতালে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের এমন পরিস্থিতিতে এত চিকিৎসক বদলি করায় আমাদের চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়তে পারে। মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান আসবে।
করোনা মহামারিতে চিকিৎসকদের গণবদলির পিছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে উল্লেখ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এমন গণবদলিতে নন কোভিড চিকিৎসায় প্রভাব পড়বে। এর পিছনে অন্যকোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিত।
একসঙ্গে এতজনের বদলি এর আগে দেখেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন বদলি এর আগে কখনও দেখিনি। এছাড়া যাদের বদলি করা করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই সিনিয়র। তাদের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে কি ধরণের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে আমার জানা নেই। এছাড়া তালিকায় বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক রয়েছে। এদের মধ্যে নাক-কান-গলার চিকিৎসক, হৃদরোগের চিকিৎসক, চক্ষুরোগের চিকিৎসকের নামও আছে। তাদের বদলি করা হয়েছে করোনা রোগের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। তারা কিভাবে করোনা রোগের চিকিৎসা সেবা দিবেন?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রামের সভাপতি মুজিবুল হক খান বাংলানিউজকে বলেন, বদলির যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে নেওয়া হয়নি। তা না হলে, একটি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা সেবা কিভাবে চলবে চিন্তা না করে এত চিকিৎসককে একসঙ্গে বদলি কিভাবে করে?
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৫ হাজারের মত রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নেন। তাদের চিকিৎসা সেবা কিভাবে দেওয়া হবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া অনেকগুলো বিভাগে সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক রয়েছে। যাদের সবাইকেই বদলি করা হয়েছে। এতে বিভাগগুলোর চিকিৎসাও সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা জুলাই ০৬, ২০২১
এমএম/টিসি