ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হয়ে যাক এক কাপ চা

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২১
হয়ে যাক এক কাপ চা ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: দেশের মানুষ নাকি প্রতিদিন ১০ কোটি ৪৩ লাখ চায়ের কাপে চুমুক দেন। চা বোর্ডের এই হিসাব চমকে দেওয়ার মতোই।

আর তা হবে না কেন, বাঙালি এখন হয়ে গেছে চা প্রিয়।

বিশ্বের সবচেয়ে উপভোগ্য পানীয় চা।

আড্ডা ও আপ্যায়নে চাই চা, ক্লান্তি ও অবসাদে প্রশান্তি পেতে চাই চা। জাতীয়ভাবে চা দিবস পালিত হচ্ছে শুক্রবার (৪ জুন)। দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, চা শিল্পের প্রসার’।


চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৪ সালে চট্টগ্রামে ১ম চা চাষ শুরু হয়। এখনও টিকে আছে ২২টি চা বাগান রয়েছে। চা উৎপাদনের কেন্দ্র সিলেট-চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে চা চাষের বিস্তৃতি ঘটেছে উত্তরাঞ্চল ও পার্বত্য জেলায়। দেশে ২০১০ সাল থেকে চা আমদানি শুরু হয়। বছরে প্রায় এক কোটি কেজি চা আমদানি করতে হতো। তবে দেশিয় উৎপাদন বাড়ানোর ফলে এখন এখানকার চাহিদা মেটানো যাচ্ছে, চা আমদানিও কমেছে।  

তথ্য মতে, ২০০৯ ও ২০১০ সালে দেশে চা উৎপাদন ছিল প্রায় ১২ কোটি কেজি। চাহিদা বাড়তে থাকায় বিভিন্ন কোম্পানি চা আমদানি শুরু করে। ২০১০ সালে ৪৩ লাখ কেজি চা আমদানি করা হয়। ২০১৫ সালে আমদানি কোটি কেজি ছাড়িয়ে যায়। এরপর দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা কেউ বাগান লিজ নিয়ে, কেউবা বিপণনে যুক্ত হন। বিভিন্ন জেলায় চা চাষ সম্প্রসারণেও উদ্যোগী হয় চা বোর্ড।  

এর সুফল মেলে ২০১৯ সালে। এসসময় উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। ২০২০ সালে চা আমদানি নেমে এসেছে ৬ লাখ কেজিতে। ২০০৯ সালে দেশে চা চাষের এলাকা ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪২ একর। সে সময় একরপ্রতি ফলন ছিল ৫০১ কেজি। আর ২০২০ সালে চা চাষের এলাকা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার একরে। অনুকূল আবহাওয়ায় ২০১৯ সালে ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের মাইলফলক ছুঁয়ে গেছে।

বাগান থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে এই চা-পাতা তৈরি হয় নানান প্রক্রিয়ায়। এতে লেগে আছে শ্রমিকদের হাতের পরশ। প্রতি কাপ চায়ের জন্য তুলতে হয় ১১ গ্রাম সবুজ পাতা-কুঁড়ি। এরপর যন্ত্রের চাপে পিষ্ট হতে হয় সেই পাতাকে। নিলামে তোলার আগে চায়ের নমুনার স্বাদ নেন টি টেস্টার। এভাবে ৮-১০ ধাপ পেরিয়ে গরম পানির সঙ্গে মিশে চা-পাতা, চুমুকে হয় সমাপ্তি।  

বাঁশখালীর চাঁদপুর বৈলগাঁও চা বাগান। ক্লোন চা উৎপাদনে এই বাগানটি বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। ৩ হাজার ৪৭২.৫৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই চা-বাগান। প্রতিদিন ৭ শতাধিক শ্রমিক এই চা বাগানে তাদের শ্রমের মাধ্যমে নতুন পাতা উৎপাদনে ট্রেসিং থেকে শুরু করে চা-বাগানের সামগ্রিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

বৈলগাঁও চা বাগানের ম্যানেজার মো. আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, এখানে কর্মচারীদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ অন্যান্য সার্বিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে চা-শ্রমিকরা তাদের কর্মঘন্টা অনুসারে ২৫ কেজি চা পাতা তুলে থাকেন। বর্তমান সময়ে তা ১০ কেজির নিচে। আমাদের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পায় সরকার রাজস্ব তত বেশি পায়। বর্তমানে চা পাতা বিক্রি করা অর্থ থেকে সরকার ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পান।

ফটিকছড়ির নারায়ণহাট ইউনিয়নে আরেকটি চা বাগানের নাম হালদা ভ্যালি। চা উৎপাদনে ‘সেরা পুরস্কার’ পেয়েছে বাগানটি। ২০১৭ সালের উৎপাদনের ভিত্তিতে চা বোর্ড এই পুরস্কার দেয়। বাগানটি ১৯০৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ছয়টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাত ঘুরে আসে পেডরোলো গ্রুপের হাতে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানকার মাটি চা চাষের উপযোগী করা থেকে শুরু করে ফলন তোলা পর্যন্ত প্রতি ধাপেই নতুন কৌশল ব্যবহার হয়েছে। তাতেই উৎপাদনে এমন সাফল্য। এই চা- বাগানের নতুন কৌশল এখন ব্যবহার করছেন অন্যরাও।

পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ক্যাটেচিন পলিফেনলস সমৃদ্ধ চা, যা ফ্রি র‌্যাডিক্যাল তৈরিতে বাধা দেয় এবং কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এ কারণে চা ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চা পাতায় উপস্থিত পলিফেনলসের পরিমাণ ২৫ শতাংশের বেশি, যা দেহের অভ্যন্তরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চা পাতায় ৭ শতাংশ থিওফাইলিন ও থিওব্রোমিন রয়েছে, যা শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির জন্যও বিশেষ উপকারী। তাহলে আর সংশয় কেন, হয়ে যাক এক কাপ চা।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২১
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।