চট্টগ্রাম: দেশে প্রথমবারের মতো উৎপাদন শুরু হয়েছে আধুনিক রিফ্লেকটিভ গ্লাসের। এর ফলে বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে গ্লাস (কাচ) উৎপাদন শিল্পে।
বিশ্বখ্যাত ‘স্পাটারিং কোটিং টেকনোলজি’ ব্যবহার করে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড রিফ্লেকটিভ গ্লাস উৎপাদন শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, রিফ্লেকটিভ গ্লাস মূলত ব্যবহার করা হয় ঘরকে রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা করে পর্যাপ্ত আলোর জন্য। অর্থাৎ রোদের প্রখরতা প্রতিহত করে ঘরে পর্যাপ্ত আলো ঢুকবে এবং সূর্যের বিকিরণ কমাবে। এটি উত্তাপ ও শীততাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যয় কমায়, এ কারণে এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। যে সব দেশে গ্রীষ্মকালে সূর্যের প্রখরতা বেশি ও প্রচণ্ড গরম পড়ে অর্থাৎ তাপমাত্রা বেশি, সে সব দেশে রিফ্লেকটিভ গ্লাস ব্যবহার করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এ মুহূর্তে দেশে এই গ্লাসের চাহিদা রয়েছে প্রচুর।
পিএইচপি সূত্র জানায়, বিগত প্রায় ১৫ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে সাধারণ ফ্লোট গ্লাসের পাশাপাশি সম্প্রতি রিফ্লেকটিভ গ্লাস উৎপাদন শুরু করলো এ প্রতিষ্ঠান। পিএইচপি এই ‘স্পাটারিং কোটিং টেকনোলজি’তে মোট ১০টি কালার রিফ্লেকটিভ গ্লাস উৎপাদন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- ডার্ক-ব্লু, ওশান-ব্লু, ডার্ক-গ্রীন, ডার্ক-গ্রে, গোল্ডেন, পার্পল, পিংক, ব্রোঞ্জ ও সিলভার রিফ্লেকটিভ গ্লাস। এই ‘স্পাটারিং কোটিং টেকনোলজি’কে সহযোগিতা করার জন্য খুবই অত্যাধুনিক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সংযোজন করা হয়েছে।
দেশে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পথিকৃৎ, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও শিল্পপতি পিএইচপি ফ্যামিলির কর্ণধার সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস নির্মাণ কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দেন তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আমির হোসেন বলেন, ২০০৫ সালে দেশের মাটিতে প্রথম উৎপাদন হয় ফ্লোট গ্লাস, যার গর্বিত অংশীদার পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এর আগে ভালো মানের গ্লাস পেতে হলে আমদানি নির্ভরতা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ দেশে প্রথম বিশ্বমানের ফ্লোটিং পদ্ধতিতে গ্লাস উপাদন করে বাজারজাত শুরু করে এবং এর ফলশ্রুতিতে বিদেশ থেকে গ্লাস আমদানি করার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
তিনি বলেন, এ ফ্যাক্টরির উৎপাদন কার্যক্রম ৩৬৫ দিন চলমান থাকে। এখানে ১ সেকেন্ডের জন্যও ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। ‘দেয়ার ইজ নো টুমরো’ অর্থাৎ এখানে যেকোনো সমস্যাই হোক তা তাৎক্ষণিকভাবেই সমাধান করতে হবে, দুই ঘণ্টা পরে করব বা আগামীকাল করব এ কথা বলার কোনো অবকাশ নেই।
আমির হোসেনের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ২০০৫ সাল থেকে দৈনিক ১৫০ মেট্রিকটন ফ্লোট গ্লাস উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে টানা ১২ বছর ১০ মাস ২ দিনের অব্যাহত অপারেশন্স পরিচালিত হয় এবং পরবর্তীতে নতুন চুল্লিতে ২০১৯ সালে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দৈনিক ১৫০ মেট্রিক টন থেকে ৩০০ মেট্রিক টন ফ্লোট গ্লাস উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে সফলভাবে এখন আরও উন্নত মানের কাচ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করছে। এতে করে প্রতি মাসে ৫০ কোটি টাকারও বেশি আমদানির বিকল্প উৎপাদন সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ।
আগামীতে একটি নতুন ধরনের কোটিং গ্লাস পিএইচপি উৎপাদন করবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন, যেটাকে প্রাইভেসি গ্লাস নামকরণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২১
এআর/টিসি