ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এক পায়ে ভর করে বাবুই পাখির মতো বাসা বেঁধেছিলাম!

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২১
এক পায়ে ভর করে বাবুই পাখির মতো বাসা বেঁধেছিলাম! ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: লালদিয়ার চর জুড়ে ভাঙার খেলা। তিন-চার যুগ ধরে গড়ে তোলা বাপ-দাদার জনবসতি বড় বড় হাতুড়ির ঘায়ে মিশছিল ধুলায়।

চারদিকে হাহাকার, বোবা কান্না। কেউ সঙ্গে নিচ্ছে পোষা মুরগি, টবে লাগানো মরিচ চারা।
কেউ চেয়ে চেয়ে দেখছিল মুকুলসহ আমগাছ কাটা হচ্ছে। সুখ-দুঃখের ঠিকানা ছেড়ে যাওয়া মানুষের মিছিল, ট্রাক-রিকশাভ্যানের বহর দীর্ঘতর হচ্ছে রাজপথে। কিন্তু হাছিনা আকতার (৩৫) ব্যতিক্রম।  

ছোট্টবেলায় পাঁচ বছর বয়সে ট্রেনের নিচে পড়ে বাম পা কাটা পড়েছিল তার। অনেক ঘাট বদল করে ১২ বছর আগে ঠাঁই গড়েছিলেন লালদিয়ার চরের খালপাড়ে। সেই থেকে ভিক্ষা করে, খেয়ে না খেয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন দুই কামরার সংসার।  

সোমবার (১ মার্চ) সকালে নিজঘরে খাটের ওপর বসেছিলেন তিনি। কোলে ছিল দেড় বছরের ছেলে ইমাম হাসান। পাশে বসেছিল ১২ বছরের ছেলে রাহিমুল হোসেন আর ১০ বছরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস। রাহিমুল করোনাকাল শুরুর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে ও জান্নাতুল মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।  

সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর বাকরুদ্ধ কণ্ঠে এই মা বললেন কষ্টের কথা। শুনে একসময়ের প্রতিবেশীদেরও চোখ ছলছল করছিল তখন। বললেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী। দেখেন আমার এক পা নেই। ভিক্ষা করে চলি। সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করছি। আমার স্বামী দিনমজুর। আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। আমার দায়িত্ব যে স্বামী নিয়েছি সেটি বড় আমার কাছে। ’ 

তিনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা মুরাদনগর নবীনগর। আমরা তিন বোন দুই ভাই। এক ভাই মারা গেছে। এখন কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কোথায় যাব? আমার থাকার জায়গা নেই। আমি মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই।

সরকারি জায়গায় বসতি গড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, জায়গাটা আমি কারও কাছ থেকে কিনিনি। নিজে খুঁটি পুঁতে, মাটি ভরাট করে বাবুই পাখির মতো একটি একটি জিনিস জোগাড় করে বাসাটি বানিয়েছি। আমি জানতাম সরকারি জায়গা। তিন-চার যুগ ধরে এ এলাকায় এত মানুষ থাকছেন দেখে আশ্রয় গড়েছিলাম। ১২ বছর দুঃখ-কষ্টে ছিলাম। এখন পথের মানুষ পথের দিকে তাকাতে হবে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন আমাকে একটা ঘর দিন, সন্তানদের বুকে নিয়ে যাতে ঘুমাতে পারি! 

বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, সোমবার বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত লালদিয়ার চর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এক হাজারের বেশি র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য এ অভিযানে অংশ নেন। এ সময় লালদিয়ার চরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা তিন শতাধিক সেমিপাকা স্থাপনা বুলডোজার ও স্ক্যাভেটারের সাহায্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আড়াইশ’ শ্রমিক উদ্ধার করা ৫২ একর জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়াসহ উচ্ছেদ অভিযানে কাজ করেছেন। উচ্ছেদ করা জায়গা বন্দরের নিজস্ব পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) ব্যাকআপ ইয়ার্ড হিসেবে কাজে লাগানো হবে।  

উচ্ছেদের মুখে লালদিয়ার চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা
লালদিয়ার চরে ৫২ একরে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে বন্দর
লালদিয়ার চর বন্দরের জায়গা, ৫২ একরে বেড়া দেবো: বন্দর চেয়ারম্যান
লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ সোমবার
লালদিয়ার চরের স্বার্থান্বেষীদের তালিকা করা হয়েছে: নৌ প্রতিমন্ত্রী
লালদিয়ার চরে বন্দরের উচ্ছেদ অভিযান শিগগির

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২১
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।