ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

উচ্ছেদের মুখে লালদিয়ার চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২১
উচ্ছেদের মুখে লালদিয়ার চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: কর্ণফুলী নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে নগরের লালদিয়ার চরে বন্দরের উচ্ছেদ অভিযানের মুখে স্বউদ্যোগে বাসাবাড়ি ছাড়ছেন বাসিন্দারা।

সোমবার (১ মার্চ) থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ছয়টি জোনে ভাগ করে ৫২ একর জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

তার আগেই কাঁচা, সেমিপাকা, পাকা বসতবাড়ি, ভাড়াঘর, দোকানপাট ভেঙে নিয়ে যান বাসিন্দারা।  

নামমাত্র মূল্যে লোহালক্কড়, টিন, ইট, বাঁশ ইত্যাদি স্পটে বিক্রি করে দেন অনেকে।

সংকট দেখা দিয়েছে পরিবহন ও শ্রমিকের। এ সময় নারী শিশুদের কান্নাকাটি, আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা দেয়।  

লালদিয়াচর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হাসান বলেন, আজ লালদিয়ার চর ছেড়ে আমরা চলে যাচ্ছি। ১৪ হাজার মানুষকে পথে নামতে হয়েছে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে গত ২০ দিন চেষ্টা করেছি। অহিংস আন্দোলন করেছি। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে আমরা চলে যাচ্ছি। জানমাল, মা, শিশু, বৃদ্ধদের রক্ষার জন্য আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যেতে হচ্ছে। ভাড়া ঘরও পাওয়া যাচ্ছে না। বন্দর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছি, আমরা দেশের জন্য জমি ছেড়ে দিয়েছি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমরা পুনর্বাসন চাই, খাসজমি চাই।  

তিনি বলেন, আমাদের নিষ্কণ্টক জায়গার পরিবর্তে ৪০০ পরিবারকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে লালদিয়ার চরে জায়গা দিয়েছিল ১৯৭২ সালে। নদী রক্ষার কথা বলে ৪৯ বছর পর আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে লালদিয়াচর মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, ২৩শ পরিবারের ১৪ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। বিমানবাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হক তৈরির সময় আমাদের উচ্ছেদ করা হয়। ১৯৭২ সালে এ জায়গা দিয়েছে। ডিসি অফিসে খাজনা দিয়েছি ২ বছর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটি দাবি, আমাদের পুনর্বাসন করা হোক। এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ, ২টি কিন্ডারগার্টেনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে চূড়ান্ত উচ্ছেদের বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও লালদিয়ার চর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটিকে জানিয়ে দিয়েছেন।  

সন্ধ্যায় বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, সোমবার বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত লালদিয়ার চর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এক হাজারের বেশি র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য এ অভিযানে অংশ নেন। এ সময় লালদিয়ার চরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা তিন শতাধিক সেমিপাকা স্থাপনা বুলডোজার ও স্ক্যাভেটারের সাহায্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আড়াইশ’ শ্রমিক উদ্ধার করা ৫২ একর জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়াসহ উচ্ছেদ অভিযানে কাজ করেছেন। উচ্ছেদ করা জায়গা বন্দরের নিজস্ব পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) ব্যাকআপ ইয়ার্ড হিসেবে কাজে লাগানো হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, আপডেট ২১৪০, মার্চ ০১, ২০২১
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।