চট্টগ্রাম: বিরোধ সৃষ্টি হলে মামলা দায়েরের প্ররোচনা না দিয়ে দুই পক্ষকে ডেকে তাদের বুঝিয়ে সমস্যার সমাধান করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আয়োজিত গ্রাম আদালত আইন ও নারীবান্ধব গ্রাম আদালত সম্পর্কে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের অবহিতকরণ সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, কিছু আইনজীবী আছেন- যারা কিন্তু গ্রাম-গঞ্জের মানুষকে সব সময় ইন্ধন দেন বা উস্কানি দেন- যে এটা হয়েছে একটা মামলা ঠুকে দেন।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখি- এমন সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে মামলা হয়, যেটাতে মামলা হওয়ার মতো কোনো যুক্তিক কারণই নেই।
জেলা প্রশাসক বলেন, এমনও কিছু বিষয় আসে- যে মামলাগুলো করা হয়, সিম্পলি ইন্ধন দিয়ে। যে ও এটা করেছে- তুই কোর্টে যা। কোর্টে গেলে তুই লাভবান হবি। এ ধরনের ইন্ধন দিয়ে কিন্তু মামলায় প্রলুব্ধ করা হয়। প্ররোচিত করা হয়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আশা করবো যেহেতু আপনাদের কাছে সচেতনতা সৃষ্টির সবচেয়ে ভালো মাধ্যম আছে, আপনারা মানুষকে সচেতন করবেন। এতে প্রলুব্ধ বা প্ররোচিত করে মামলা করানোর প্রবণতা কমবে।
যারা এই কাজ করেন তাদের নজরে বিষয়টি আনতে হবে। প্ররোচিত করে মামলা করানোর প্রবণতা বন্ধ হলে যারা সাধারণ মানুষ, গ্রাম-গঞ্জের মানুষ, তারা প্রলুব্ধ হয়ে আদালতে আসবে না। এটি বন্ধ করতেই হবে। কারণ আদালতে আসা একবার শুরু হলে আর শেষ হয় না।
জেলা প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম এসে এটার কিছু খারাপ নজির দেখেছি আমি। আমার কাছে এরকম অনেক বিষয় আসছে। তাদের বুঝিয়ে বলে দিয়েছি। সমাধান হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, হয়তো আমার ৫ মিনিটের জায়গায় ১০ মিনিট সময় লেগেছে। ১০ মিনিটের জায়গায় ২০ মিনিট সময় দিতে হয়েছে। হয়তো পুরো বিষয়টি দুই দিন শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি দেখেছি- দুই পক্ষকে বুঝিয়ে বলার পর সমাধান হয়ে গেছে।
সমাজে আমাদের যাদের একটু অবস্থান আছে- আমাদের যাদেরকে মানুষ একটু মান্যগণ্য করে- তারা যদি এই উদ্যোগ নেন, তাহলে কিন্তু আমাদের মামলার সংখ্যা কমে আসবে।
মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য হচ্ছে- আমরা আসলে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাই। আমি যদি মনে করি- আমি একাই ভালোভাবে বেঁচে থাকবো, আমি একাই সম্পদ উপার্জন করবো, আমার পরিবার ভালো থাকবে, তাহলে সেই ভালো থাকা কিন্তু কোনোদিন ভালো থাকা হবে না।
একা কিন্তু মানুষ ভালো থাকতে পারে না। তার পরিবার, তার আত্মীয়-স্বজন, তার প্রতিবেশী, তার সমাজ, তার দেশ যদি ভালো না থাকে, একার পক্ষে ভালো থাকা সম্ভব না। সুতরাং এ দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা যেন সবাইকে নিয়ে ভালো থাকি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. বদিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার। সভা সঞ্চালনা করেন সহকারী কমিশনার (স্থানীয় সরকার) নূর জাহান আক্তার সাথী।
অবহিতকরণ সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন এর মাধ্যমে বন্দরনগর চট্টগ্রামে গ্রাম আদালতের নানান কার্যক্রম সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর উজ্জ্বল কুমার চৌধুরী।
সভায় জানানো হয়- ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউএনডিপি এবং সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের সহায়তায় চট্টগ্রামের ৫টি উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, লোহাগাড়া, সন্দ্বীপ, সাতকানিয়া এবং সীতাকুণ্ডে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ৭ হাজার ৩৫৫টি মামলার মধ্যে ৭ হাজার ৯৯টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
এছাড়া গ্রাম আদালতের মাধ্যমে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলায় ৩ কোটি ৮৮ লাখ ১৮ হাজার ৮৩১ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বিচারপ্রার্থীরা।
আরও খবর>> মামলার জট কমাতে আশার আলো দেখাচ্ছে গ্রাম আদালত
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১
এমআর/টিসি