চট্টগ্রাম: উচ্চ আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালত আশার আলো দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগ চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. বদিউল আলম।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গ্রাম আদালত আইন ও নারীবান্ধব গ্রাম আদালত সম্পর্কে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের অবহিতকরণ সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ড. বদিউল আলম বলেন, দেশের উচ্চ আদালতে এখন প্রায় ৩৫ লাখ মামলা বিচারাধীন। সরকারি নানা উদ্যোগের পরেও বিচার পেতে মানুষকে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্রাম আদালত মানুষের দোরগোড়ায় হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এই আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ায় সহজেই অংশ নিতে পারেন। দ্রুত সময়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয় বলে এখানে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
বদিউল আলম বলেন, গ্রাম আদালতের প্রধান থাকেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। ৫ সদস্য বিশিষ্ট বিচারিক প্যানেলের বাকি ৪ জন দুইপক্ষ মিলে ঠিক করতে পারেন। স্থানীয় ঘটনা, স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিচার হয় বলে এখানে মূল ঘটনা উঠে আসে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ চট্টগ্রামের আয়োজনে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার।
সুমনী আক্তার বলেন, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে স্বল্প খরচে, অল্প সময়ে, সহজে বিচার পাওয়া সম্ভব। নারীদের বিচার পেতে গ্রাম আদালত বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, একজন নারীকে জেলা আদালতে বিচার পেতে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মামলায় হাজিরা দেওয়া, সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা, নিয়মিত মামলা তদারক করা নারীর জন্য কঠিন।
সুমনী আক্তার বলেন, জেলা আদালতের চেয়ে গ্রাম আদালতে বিচার প্রক্রিয়া সহজ। নিজ এলাকায় হওয়ায় নারীরা সহজেই এই আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। উচ্চ আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতকে আরও সক্রিয় করার বিকল্প নেই।
গ্রাম আদালতের কার্যক্রম প্রচারে গণমাধ্যমকর্মীদের আরও বেশি ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ভালো প্রচার পেলে মানুষ যেমন গ্রাম আদালতে আসতে উৎসাহী হবে, তেমনি কোনো অনিয়মের খবর দেখলে তা দেখে অনিয়ম বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।
অবহিতকরণ সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন এর মাধ্যমে বন্দরনগর চট্টগ্রামে গ্রাম আদালতের নানান কার্যক্রম সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর উজ্জ্বল চৌধুরী।
সভায় জানানো হয়- ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউএনডিপি এবং সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের সহায়তায় চট্টগ্রামের ৫টি উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, লোহাগাড়া, সন্দ্বীপ, সাতকানিয়া এবং সীতাকুণ্ডে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ৭ হাজার ৩৫৫টি মামলার মধ্যে ৭ হাজার ৯৯টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
এছাড়া গ্রাম আদালতের মাধ্যমে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলায় ৩ কোটি ৮৮ লাখ ১৮ হাজার ৮৩১ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বিচারপ্রার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১
এমআর/এসি/টিসি