ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জেএম সেন ভবনে জাদুঘর: ২৯ জানুয়ারি আনন্দ মিছিল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
জেএম সেন ভবনে জাদুঘর: ২৯ জানুয়ারি আনন্দ মিছিল সচেতন নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলন।

চট্টগ্রাম: যাত্রামোহন (জেএম) সেন ভবন দখলমুক্ত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কাজে প্রাথমিক বিজয় উদযাপনে আগামী ২৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) আনন্দ মিছিল করবে সচেতন নাগরিক সমাজ।  
 
নগরের চেরাগি পাহাড় থেকে ওইদিন বিকেল চারটায় মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঐতিহাসিক জেএম সেন ভবনের সামনে শেষ হবে।

 

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।  

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় জাদুঘরের সাইনবোর্ড উঠেছে।

আমরা প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।  

কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, সবাইকে বুঝতে হবে জাদুঘর তৈরি করা একটা বিশেষায়িত কাজ। আন্দোলন করা সহজ। অনেকে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু জাদুঘর তৈরিতে আন্তর্জাতিক বৈশিষ্ট্য আছে। আমার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সে নিউজিল্যান্ডে অবস্থানরত জেএম সেন ও নেলী সেনগুপ্তার নাতির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা দুইজনের অথেনটিক জীবনী রাখতে চাই জাদুঘরে। বিভ্রান্তি দূর করতে চাই। সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ করা হবে। আমরা চাইবো, জাদুঘরে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি বিশেষভাবে থাকুক। এ পর্বটি আমাদের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত চট্টগ্রামের অবদান সর্বভারতে স্বীকৃত। কিন্তু সেটার নিদর্শন চট্টগ্রাম সেভাবে রাখেনি।  প্রাথমিক বিজয় জানান দিতে আপাতত বিপ্লবীদের, তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের ছবি, বই, দলিল, ছবি যা পাওয়া যায় তা প্রদর্শন করবো।  

তিনি বলেন, জাদুঘরের জন্য প্রকল্প তৈরি করতে হবে। বাজেট করতে হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নিতে হবে। বহুতল ভবন তৈরি করতে হবে।  

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংবাদিক আলিউর রহমান। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা-গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী, কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, কর্ণফুলী গবেষক ড. ইদ্রিস আলী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, আবৃত্তিকার রাশেদ মাহমুদ, শ্যামল কুমার পালিত, ড. জিনবোধি ভিক্ষু প্রমুখ।

সম্প্রতি আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িতে ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ নির্মাণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে শনিবার (২৩ জানুয়ারি) নগরের বাকলিয়া সার্কেলের রহমতগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ভবনটিতে নোটিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়।  

অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি সেখানে ‘বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নাম বদলে সেই ভবনে ‘শিশুবাগ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।  
 
৪ জানুয়ারি সকালে এম ফরিদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির ছেলেরা আদালতের আদেশ নিয়ে বাড়িটির দখল নিতে আসেন। পুলিশের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের নাজির আমিনুল হক আকন্দ ‘দখল পরোয়ানা’সহ কাগজপত্র নিয়ে তাদের বাড়িটি বুঝিয়ে দেন। দুপুরে বুলডোজার দিয়ে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি ভাঙা শুরু হলে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে স্থানীয়রা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তারা ঐতিহাসিক এই ভবনটি না ভেঙে সংরক্ষণের দাবি জানান।

খবর শুনে ঘটনাস্থলে হাজির হন জেলা প্রশাসনের বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হাসান। তিনি নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে সাংবাদিকদের জানান, জমিটি সরকার লিজ দিয়েছে। ইজারা দেওয়া জমির বিষয়ে আদালতের কোনো আদেশ হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা এখন তালাবদ্ধ করে যাব। এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এরপর থেকে সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়।

৬ জানুয়ারি জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির দখল ও অবস্থানের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেন।

ঐতিহাসিক বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণ করার ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ওই স্থাপনাকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭ জানুয়ারি যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িটি ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের ২০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশও দেন।

এরমধ্যে যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষায় চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, রাজনীতিক থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ আন্দোলনে নামেন। ঐতিহাসিক এই ভবনটিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে নির্মাণের দাবিও জানান তারা।

সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও ভবনটি পরিদর্শন শেষে এটি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।