ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গ্রাম আদালত: দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি, বিচারপ্রার্থীর মুখে হাসি

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
গ্রাম আদালত: দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি, বিচারপ্রার্থীর মুখে হাসি ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: ছোট ছোট দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রাম আদালত চালু করে সরকার। উচ্চ আদালতে মামলার জট নিরসন এবং অল্প সময়ে স্বল্প খরচে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বিচার প্রাপ্তিতে সুবিধা দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সুফলও মিলেছে সরকারি এ উদ্যোগের। দেশের উচ্চ আদালতগুলোতে যেখানে মামলার জট বেড়েই চলেছে সেখানে প্রায় শতভাগ মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলার জট নিরসনে পথ দেখাচ্ছে গ্রাম আদালত।

শুধু চট্টগ্রামেই গ্রাম আদালতে গত সাড়ে ৩ বছরে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ৯৬ ভাগ।

দেশের ২৭ জেলার ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে ইউএনডিপি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের অধীনে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, সন্দ্বীপ এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় গত সাড়ে তিন বছরে চট্টগ্রামের ৪৬টি ইউনিয়নে ৭ হাজার ১৯৯টি মামলা গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৬ হাজার ৯১৭টি মামলাই নিস্পত্তি করা হয়েছে। এই সময়ে গ্রাম আদালতে ৪ হাজার ৭৫১টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার ৩ হাজার ৭২৯টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে।  

নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ছাড়াও গত সাড়ে ৩ বছরে চট্টগ্রামের গ্রাম আদালতে ২ হাজার ৫৫৩ জন নারী বিচার চেয়ে আবেদন করেন। আর ৯৭৬ জন নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিচারিক প্যানেলে সদস্য ছিলেন। এছাড়া এই সময়ে ১৮৫ জন দলিত ও ২৮ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি গ্রাম আদালতের সেবা গ্রহণ করেন।  

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই পর্যন্ত গ্রাম আদালতের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করে ৭৫৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা।  

এছাড়া গত সাড়ে তিন বছরে প্রকল্পভূক্ত গ্রাম আদালত ৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে দিতে সক্ষম হয়েছে। আর ইউনিয়ন পরিষদগুলো ফি হিসেবে আয় করেছে ৮৮ হাজার ৬৪০ টাকা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. বদিউল আলম বাংলানিউজকে জানান, গ্রাম আদালতে গরিব ও অসহায় মানুষ স্বল্প সময়ে অল্প খরচে ন্যায়বিচার পাচ্ছে। জেলার সব ইউনিয়নে (১৯১টি) গ্রাম আদালত কার্যক্রমকে শক্তিশালী, গতিশীল ও কার্যকর করার জন্য স্থানীয় সরকার, চট্টগ্রাম এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সরকারের একটি অন্যতম অঙ্গীকার। তাই ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রাম আদালতের সুনাম ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত বিচারিক সেবা পৌঁছে দিতে, স্থানীয় পর্যায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদসমূহকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

বদিউল আলম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদসমূহ এই আইনের আওতায় নিয়মিত গ্রাম আদালত পরিচালনা করলে এ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো থানায় বা জেলা আদালতে দায়ের করার প্রয়োজন হবে না। এতে দেশের বিচারিক আদালতগুলোর মামলার জট অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।