ঢাকা, রবিবার, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ জুন ২০২৪, ০৮ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাংলানিউজে সংবাদ: উত্তমের পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২১
বাংলানিউজে সংবাদ: উত্তমের পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার

চট্টগ্রাম: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে বোমা হামলায় নিহত উত্তম বিশ্বাসের পরিবারের জন্য উপহার হিসেবে নতুন জামা, মৌসুমী ফল এবং নগদ সহায়তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) ড. বদিউল আলমের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি দল নগরের পাথরঘাটা এলাকায় উত্তম বিশ্বাসের বাসায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এসব উপহার পৌঁছে দেন।

ড. বদিউল আলম বাংলানিউজকে জানান, স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে গিয়ে বোমা হামলায় নিহত উত্তম বিশ্বাসের পরিবারের করুণ অবস্থা নিয়ে বাংলানিউজসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে শনিবার উত্তম বিশ্বাসের পরিবারের খবর নিতে ডিসি স্যারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ডিসি স্যার সরকারি কাজে ঢাকা থাকায় তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা উত্তম বিশ্বাসের পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার পৌঁছে দিয়েছি।

উত্তম বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামা, শীতবস্ত্র, মৌসুমী ফল, শিক্ষা উপকরণ এবং নগদ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তারা একটি নতুন বাড়ি চেয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়কে অবহিত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।

এরশাদ সরকারের শাসনামলে ১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন পাথরঘাটার বাসা থেকে স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে গিয়ে বোমা হামলার শিকার হন ৭ম শ্রেণির ছাত্র উত্তম বিশ্বাস। বোমা হামলার পর ছত্রভঙ্গ মিছিল থেকে কয়েকজন ছুটে এসে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে মায়ের কোলেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।  

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারাদেশে ১২ জানুয়ারি পূর্ণদিবস ও ১৩ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল পালন করে। এ সময় সংগঠনটি এক বিবৃতিতে হরতাল চলাকালে মিছিলের ওপর জামায়াত-শিবিরের বোমা হামলায় উত্তম বিশ্বাস নিহত হন বলে দাবি করে।

ঘটনার ১৪ দিন পর ২৫ জানুয়ারি দুপুরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাথরঘাটায় উত্তমের বাসায় এসে তার বাবা-মা, ভাই-বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে যান। এছাড়া আরও অনেকে আসেন তাদের বাসায়। সবাই এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস, পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

তবে এ ঘটনার দীর্ঘ ৩১ বছর কেটে গেলেও বোমা হামলায় নিহত শিক্ষার্থী উত্তম বিশ্বাসের পরিবারের খবর নেননি কেউ। পুত্রশোকে পাগলপ্রায় বাবা অমল কান্তি বিশ্বাস ২০০৫ সালে ও মা লক্ষ্মী বিশ্বাস ২০১২ সালে মারা গেছেন।

শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) একত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি শিরোনামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে বোমা হামলায় নিহত উত্তম বিশ্বাসের পরিবারের করুণ অবস্থা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বাংলানিউজ। এরপর দিন শনিবার (৯ জানুয়ারি) দেশের আরও কয়েকটি গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

এসব সংবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হলে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তিনি তার একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে নির্দেশনা দেন। এরই প্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় উত্তম বিশ্বাসের বাসায় পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার।

দীর্ঘ ৩১ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন উত্তম বিশ্বাসের বোন অলকা বিশ্বাস। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, কখনো ভাবিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের খবর নেবেন। আমাদের এই দু:সময়ে পাশে দাঁড়াবেন। তাকে ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। আশীর্বাদ করি- তিনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুন। আমাদের মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।

অলকা বিশ্বাস বলেন, আমার ভাই মারা গেছেন। তাকে আমরা আর ফিরে পাবো না। ভাইয়ের শোকে কাতর বাবা-মাকেও হারিয়েছি। এখন দুই ভাই, দুই বোন বেঁচে আছি। আমরা একটি মাথা গোঁজার ঠায় আর একটি সরকারি চাকরি চাই। ভালোভাবে বাঁচতে চাই।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) ড. বদিউল আলম বাংলানিউজকে বলেন, তারা অর্পিত সম্পত্তির একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে থাকেন। তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কয়েকজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে। বাড়ি আর চাকরির চাওয়াসহ তাদের সব তথ্য রাতেই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।

উত্তম বিশ্বাসের বাসায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার পৌঁছে দেওয়ার সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের স্টাফ অফিসার মো. ওমর ফারুক এবং জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. মাসুদ রানা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২১
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।