ঢাকা, রবিবার, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ জুন ২০২৪, ০৮ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অঞ্জলী হত্যা: ৬ বছরেও কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ

সরওয়ার কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২১
অঞ্জলী হত্যা: ৬ বছরেও কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ অঞ্জলী দেবী

চট্টগ্রাম: ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি। প্রতিদিনের মতো ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন তেলিপট্টি মোড়ের উর্দু গলির বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলী দেবী (৫৮)।

 

বাসা থেকে বের হয়ে মাত্র ৫০ গজ পথ যেতেই হামলার শিকার হন অঞ্জলী দেবী। মুখোশধারী চার অজ্ঞাত যুবক চাপাতি দিয়ে অঞ্জলী দেবীকে ঘাড়ে ও মাথায় কুপিয়ে আহত করে।

পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অঞ্জলী দেবীকে মৃত ঘোষণা করেন।  

অঞ্জলী দেবীকে হত্যার ঘটনায় ওইদিনই তার স্বামী ডা. রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত চার যুবককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর: ৩ (০১)২০১৫।  

মামলা দায়েরের পর অঞ্জলী দেবী হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ এ পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ছয়জন হলেন- এরশাদ হোসেন, মো. শফিকুল ইসলাম, মোসাবিরুল আলম, এহেতাশামুল হক ভোলা, মো. আবু সাঈদ ও মো. রেজা।  

এদের মধ্যে এরশাদ হোসেন, মো. শফিকুল ইসলাম, মোসাবিরুল আলম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এহেতাশামুল হক ভোলা, মো. আবু সাঈদ ও মো. রেজা জামিনে রয়েছেন। তবে অন্য একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন মো. আবু সাঈদ। মো. রেজা এ মামলায় উচ্চ আদালতে যান। আদালত তাকে ২০১৫ সালের ১৫ মে থেকে রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেন।  

গ্রেফতার ছয়জনকে বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। কিন্তু শিক্ষিকা অঞ্জলী দেবীর খুনি কারা, কী উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করা হয়েছে বা হত্যায় অংশ নেওয়া চার যুবক কারা তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। গত ছয় বছরে অগ্রগতি বলতে কেবল একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ ঘুরে শেষ পর্যন্ত বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তভার গিয়ে পড়েছে পুলিশ ব্যাুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর উপর। গত এক বছর ধরে মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মো. জাহিদ হোসেন।  

নিহত অঞ্জলী দেবীর স্বামী ও মামলার বাদি ডা. রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে ছয় বছর শেষ হলো। কিন্তু এ ছয় বছরেও জানতে পারলাম কারা আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে বা কেন করেছে। কী দোষ করেছিল অঞ্জলী? 

ডা. রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী বলেন, আমারও বয়স হয়েছে। কখন মারা যাই ঠিক নেই। কিন্তু স্ত্রী হত্যার বিচার দেখে মরতে চাই।  

অঞ্জলী দেবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর তেলিপট্টি মোড়ের উর্দু গলির বাসা ছেড়ে দিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী চলে গিয়েছিলেন ডা. রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী। সেখানে বছর খানেক থাকার পর এখন মেয়ের সঙ্গে মেহেরপুরে বসবাস করছেন তিনি।  

তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, অঞ্জলী দেবী হত্যা মামলাটি আমরা তদন্ত করছি। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের কাছ থেকে অঞ্জলী দেবী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য বা ক্লু পাওয়া যায়নি। গ্রেফতার ছয়জনকে বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে এ মামলাটির তদন্তকাজ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।  

ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছিল, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডে চার যুবক অংশ নেয়। তাদের প্রত্যেকের কাঁধে স্কুলব্যাগ ছিল। ওই ব্যাগে করে তারা রামদা নিয়ে আসে। অঞ্জলী দেবীকে কুপিয়ে রামদা ব্যাগের ভেতর নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২১
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।