ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জেএম সেন ভবন ভাঙায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২১
জেএম সেন ভবন ভাঙায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবি জেএম সেন ভবনে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবিতে পদযাত্রা। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন (জেএম) সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং সব ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণসহ ৫ দফা দাবি জানানো হয়েছে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সচেতন নাগরিকবৃন্দ আয়োজিত সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে।  

শুক্রবার (০৮ জানুয়ারি) নগরের চেরাগি পাহাড় মোড়ে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বক্তারা বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার চট্টগ্রাম সবসময়  সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

যাত্রামোহন সেনগুপ্ত ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অবিভক্ত ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা থাকা দেশে মানুষ ভ্রমণের জন্য যায়।
অথচ চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন স্থাপনা থেকেও তা রক্ষা করা হয়নি। বারবার এসব ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো ভেঙে ফেলার চক্রান্ত হয়েছে। যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনের অংশ ভাঙা হয়েছে বুলডোজার দিয়ে।  

সরকারের পক্ষ থেকে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে সমাবেশ থেকে বলা হয়, নতুন প্রজন্ম কীভাবে জানবে এটা ঐতিহাসিক স্থাপনা? তাদের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে মৌলবাদীরা এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস পায়। যারা এসব স্থাপনায় আঘাত করেছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে ঘটনা তদন্ত করা হোক।  

একইসঙ্গে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতি সংরক্ষণ করার দাবি জানান বক্তারা।

সাংবাদিক মিন্টু চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম বলেন, আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির আইনি জটিলতা নিরসনের। এজন্য সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সব স্থাপনাকে আমরা হারিয়ে যেতে দেব না। এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আমরা তুলে ধরব। অবিলম্বে এ স্থাপনা ভাঙচুরকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।  

মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এমন স্থাপনা ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। যারা এমন দৃষ্টতা দেখিয়েছে তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। পাশপাশি এমন স্থাপনাকে সংরক্ষণ করে জাদুঘর করা হোক।  

নারীনেত্রী নূর জাহান খান বলেন, চট্টগ্রামের তরুণ সাংবাদিকরা যাত্রামোহন সেনের বাড়ি রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে। এই আন্দোলনটি তারাই পরিচালনা করেছে। চট্টগ্রামের এসব স্মৃতি স্থাপনায় আঘাত করেছে ভূমিদস্যুরা। কত বড় দুঃসাহস তারা দেখিয়েছে, এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হতে হবে।  

একাত্তরের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার সংহতি জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের দল সরকারে থাকা অবস্থায় কেন এমন হচ্ছে বারবার। এদেশ সিরিয়া, পাকিস্তান হবে না। যাত্রামোহন সেনের বাড়ি ভাঙচুর করে যে দৃষ্টতা ভূমিদস্যুরা দেখিয়েছে তার বিচার হতেই হবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এ নিয়ে আন্দোলনে রাজপথে থাকবো।  

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ভূমিদস্যুরা প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই ভাঙচুর চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এসব স্মৃতিচিহ্ন ঐতিহ্য এবং বধ্যভূমি রক্ষা করতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে। সম্মিলিতভাবে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষা করতে হবে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, খেলাঘর কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক উত্তম চৌধুরী, জামাল খান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, উদীচীর সংগঠক শীলা দাশগুপ্তা, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান, ন্যাপনেতা মিটুল দাশগুপ্ত, সিপিবি চট্টগ্রামের নারী সেলের আহবায়ক রেখা চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওমর ফারুক রাসেল, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের টিভি ইউনিটের প্রধান মাসুদুল হক, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আলীউর রহমান, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিঞ্চন ভৌমিক, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক আহমেদ মুনীর চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।

বিপ্লবীদের স্মৃতিধন্য স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো সংরক্ষণের দাবিতে নাগরিকদের পদযাত্রা রহমতগঞ্জে যাত্রামোহন সেনগুপ্তর বাড়ির সামনে গিয়ে কমর্সূচি সমাপ্ত করেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা।  

কর্মসূচিতে সংহতি জানায় মহিলা পরিষদ, খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, নাট্য সংগঠন ফেইম, 

নাগরিক সমাবেশ থেকে ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষা এবং তা সংরক্ষণসহ পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন সাংবাদিক প্রীতম দাশ।  দাবিগুলো হল- যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন  সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়িসহ সম্পত্তি সরকারি অধিগ্রহণ এবং সেখান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাদুঘর স্থাপন করতে হবে এবং সেখানে অতীতের সব লিজ/ইজারা বাতিল করতে হবে।  ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা সংরক্ষণ করতে হবে। মাস্টারদা সূর্য সেনসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের যোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণ নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ করতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তকে বিপ্লবীদের সঠিক ইতিহাস যুক্ত করতে হবে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।

>> জেএম সেন ভবন রক্ষায় আইনি লড়াই চালানোর অনুরোধ সুজনের
>> সেই ভবনের দখল-অবস্থানের ওপর হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা
>> বিপ্লবীদের স্মৃতিরক্ষায় আইনি উদ্যোগে পিছপা হবো না: রানা দাশগুপ্ত
>> ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিরক্ষায় বুলডোজারের সামনে রানা দাশগুপ্ত 

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২১
এআর/টিসি  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।