চট্টগ্রাম: বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটা। চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের নিচতলার গেইটে হাতকড়া পরা এক যুবককে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন চারজন পুলিশ সদস্য।
প্রায় ১০ মিনিট সেখানে অবস্থান করে দেখা গেছে, বেশ কিছুক্ষণ ধরে কথা বলছেন হাতে হাতকড়া লাগানো সেই যুবক।
বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটের দিকে হাতকড়া পরা যুবকের জন্য সিগারেটের প্যাকেটও এনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে দেয় আরেক যুবক। হাতকড়া পড়া আসামির পরিচিত দুই যুবক ও তার আইনজীবীও একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
হাতকড়া পরা সেই যুবককে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা চার পুুলিশ সদস্যের মধ্যে একজনের নেমপ্লেট দেখা গেছে। তিনি ফটিকছড়ি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয়। বাকি তিনজনের নেমপ্লেট জ্যাকেট পরে থাকার কারনে দেখা যায়নি।
বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে ওই যুবককে জেলা পুলিশের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া যায়। তাদের অনুসরণ করে এ প্রতিবেদক হাজতখানার সামনে যান। পরে ওই যুবকের পরিচয় জানতে পারেন।
হাতকড়া পরে মোবাইলে কথা বলা সেই যুবকের নাম মুহাম্মদ হাসান প্রকাশ পাঠান হাসান (৩৫)। তিনি ফটিকছড়ি থানাধীন মাইজভান্ডার পাঠান বাড়ির নুরুচ্ছফার ছেলে। মুহাম্মদ হাসান প্রকাশ পাঠান হাসান ৪ জানুয়ারি ফটিকছড়ি থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার এক নম্বর এজাহারনামীয় আসামি। মামলা নম্বর: ২ (০১) ২০২১।
জানতে চাইলে ফটিকছড়ি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় বাংলানিউজকে বলেন, মুহাম্মদ হাসান প্রকাশ পাঠান হাসান ফটিকছড়িতে মারামারির মামলার এক নম্বর আসামি। তাকে আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে কীভাবে আসামি মোবাইল ফোনে কথা বলেন তা জানতে চাইলে এসআই সঞ্জয় বাংলানিউজকে বলেন, মুহাম্মদ হাসান মোবাইলে কথা বলেছে। ওই মামলায় আরও কিছু আসামি আছে যাদের ধরা হয়নি। টেকনিকালি আমরা যদি আসামি ধরতে পারি সে কারনে কথা বলতে দেওয়া। আমাদের আসামি ধরার খুব প্রেশার আছে।
আসামিকে এভাবে মোবাইলে কথা বলতে দেওয়ার কোনো নিয়ম আছে কী না জানতে চাইলে তখন বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান এসআই সঞ্জয়। তিনি অন্য কাজে কোর্টে এসেছেন বলে দাবি করেন তখন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এইচএম দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আসামি হাসানকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমি তো সঙ্গে যাইনি। এএসআই আবদুর রশিদসহ অন্যরা গেছেন। এভাবে তো মোবাইলে কথা বলতে দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। যারা কাজ করেছেন তারা ঠিক করেননি।
এএসআই আবদুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আসামি আদালতে বুঝিয়ে দিয়েছি। তার পরের দায়িত্ব আমাদের নয়।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক ও ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
ফটিকছড়ি নানুপুর এলাকায় জমির দখল নিয়ে মারামারি ও গোলাগুলির ঘটনার পর ৪ জানুয়ারি রাতে মামলা দায়েরের পর থেকে মুহাম্মদ হাসান প্রকাশ পাঠান হাসান পলাতক ছিলেন। বুধবার (৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে মুহাম্মদ হাসান প্রকাশ পাঠান হাসানকে চট্টগ্রাম নগরের শুলকবহর এলাকা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্যরা। পরে তাকে ফটিকছড়ি থানায় হস্তান্তর করে র্যাব-৭।
মুহাম্মদ হাসান প্রকাশ পাঠান হাসানকে চট্টগ্রাম নগরের শুলকবহর এলাকা থেকে আটকের বিষয়টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে র্যাব-৭।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, মুহাম্মদ হাসান প্রকাশ পাঠান হাসান একজন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী। নানুপুর এলাকায় জমির দখল নিয়ে মারামারি ও গোলাগুলির ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন। বুধবার দিবাগত রাতে শুলকবহর এলাকা থেকে হাসানকে আটকের পর ফটিকছড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২১
এসকে/টিসি