চট্টগ্রাম: গাঢ় সবুজ জমিনের মধ্যে টকটকে লাল সূর্য। একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার প্রতীক একেকটি জাতীয় পতাকা।
বৈশ্বিক মহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাংলাদেশে।
নগরের কোতোয়ালী থানাধীন লয়েল রোডের সাফা কমপ্লেক্সে আবু খলিফার ‘পতাকা বিতান’ নামের দোকানটিতে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আবু খলিফা বাংলানিউজকে বলেন, আমার ভালো নাম আবু আহমেদ। চট্টগ্রামে দর্জিদের খলিফা সম্বোধন করা হয়। তাই আমার আসল নাম ফিকে হতে হতে লোকমুখে আবু খলিফাই ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামে আশির দশকে ফেনীর লালপোল থেকে এসেছিলাম সিনেমা প্যালেস এলাকার ‘আবদুল মান্নান অ্যান্ড সন্স’ নামের পতাকার দোকানে চাকরি নিয়ে। আমিই বিখ্যাত দোকানটির বেশিরভাগ পতাকা সেলাই করতাম। বাংলাদেশের জাতীয় দিবস, বিশ্বকাপ ফুটবল ও ক্রিকেটকে ঘিরে পতাকার চাহিদা ছিল তুঙ্গে। দোকানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নিজেই পতাকার দোকান খুলে বসি।
পতাকা সেলাই ও বিক্রি করেই সংসার চলে আবু খলিফার। এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলেকে সৌদি আরব পাঠিয়েছেন। আরেক ছেলে পড়াশোনা করে। বললেন, পতাকা হচ্ছে সম্মান ও গর্বের। সেই পতাকার সঙ্গে জীবন কাটিয়ে নিজেও গর্বিত মনে করি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করি মনের তাগিদে। বিক্রি হবে কি হবে না জানি না। না হলেও দুঃখ নেই। কিন্তু যদি নিয়মিত ক্রেতারা পতাকার জন্য এসে খালি হাতে ফিরতে হয় সেটা হবে কষ্টের। ব্যবসা হয় বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইতালি, জার্মানি, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের পতাকায়।
তিনি বলেন, টেরিবাজার থেকে পাইকারি কাপড় কিনে পতাকা তৈরি করি আমি। পলিয়েস্টার কাপড়ের পতাকায় খরচ কম পড়ে তাই বিক্রিও হয় বেশি। উন্নতমানের সুতোর কাপড়ের পতাকা বানাই অর্ডার পেলে। আমার তৈরি পতাকা নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার, বিভিন্ন উপজেলায় পাইকারি নিয়ে যান। অনেক মৌসুমি ফেরিওয়ালাও নিয়ে যায় ডিসেম্বরে।
‘পতাকা সবাই সেলাতে পারে না। সঠিক মাপের পতাকা না হলে আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়। আমি দৈর্ঘ্য, প্রস্ত ও বৃত্তের সঠিক মাপের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। সর্বনিম্ন ৩ টাকা থেকে ২৫০ টাকার পতাকা তৈরি করি। একজীবনে বড় র্যা লির জন্য ৫০০ গজ লম্বা পতাকাও তৈরি করেছি আমি। চৌধুরীর (এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী) মৃত্যুর পর কেন জানি পতাকা বিক্রি হয় না!’ বলতে বলতে আফসোস ঝরে পড়ে আবু খলিফা।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
এআর/টিসি