ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুই মাসে ১৩৫৫ কেজি স্বর্ণ এনেছেন মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীরা!  

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২০
দুই মাসে ১৩৫৫ কেজি স্বর্ণ এনেছেন মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীরা!   মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা যাত্রীরা বৈধভাবে আনছেন স্বর্ণ

চট্টগ্রাম: মধ্যপ্রাচ্য থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আসা যাত্রীরা অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ১ হাজার ৩৫৫ কেজি স্বর্ণ এনেছেন। এর বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এর মধ্যে শুধু গত নভেম্বরেই ঘোষণা দিয়ে আনা হয়েছে ৯ হাজার ৩৬৭টি স্বর্ণের বার। প্রতিটি বারের ওজন প্রায় ১১৭ গ্রাম।
যা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও বিমানবন্দরটির জন্য বড় একটি মাইলফলক।  

দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২৬ নভেম্বর যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের বার আনেন, ৬৮৭টি। ১৯ নভেম্বর ছিল ৬৪৫টি। ২৪ নভেম্বর ৬৩৮টি। ১৭ নভেম্বর এসেছিল ৫৭২টি। ১২ নভেম্বর এসেছিল ৫২৩টি। চার শতাধিক স্বর্ণের বার এসেছে ৩, ৫, ১০, ১৪, ২১, ২৭, ২৮ নভেম্বর।   

সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী প্লেন চলাচল। এরপর নতুন করে ফ্লাইট চালু হলে কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলমের নির্দেশনায় চোরাচালান, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে কঠোর নজরদারি, রামেজিং (তল্লাশি) ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ায় বিমানবন্দর কাস্টমস টিম। তৎপর হয় বিভিন্ন সরকারি সংস্থার লোকজনও। অক্টোবরে ধরা পড়ে দুইটি বড় স্বর্ণের চালান। তারপর থেকেই যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী বৈধভাবে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ২টি বার ঘোষণা দিয়ে আনার সুযোগে স্বর্ণ আনার হিড়িক পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট আসার পর ইমিগ্রেশন শেষে স্বর্ণের বার আনার ঘোষণা দেওয়া যাত্রীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাস্টমস বুথ থেকে রশিদ সংগ্রহ করতে হয়।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণের বার আনার ঘোষণা দিয়ে রশিদ সংগ্রহের লাইন২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ব্যাগেজ রিসিটের (বিআর) মাধ্যমে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীরা স্বর্ণ এনেছেন মোট ১০৪ কেজি ২৩৫ গ্রাম। এর বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৮৪ টাকা। করোনার কারণে গত এপ্রিল-জুন ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় স্বর্ণও আসেনি।  

এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুলাইতে ৭ দশমিক ১৫ কেজি, আগস্টে ৮ দশমিক ২৪ কেজি, সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ২২ কেজি, অক্টোবরে ৯ দশমিক ২৮ কেজি, নভেম্বরে ১৩ দশমিক ৬৭ কেজি, ডিসেম্বরে ১৫ দশমিক ০৯ কেজি, গত জানুয়ারিতে ১৪ দশমিক ৫১ কেজি, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ দশমিক ৯৭ কেজি ও মার্চে ৭ দশমিক ১১ কেজি স্বর্ণ আনেন যাত্রীরা।

১৫ অক্টোবর ১৬০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিমানবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মুনাওয়ার মুরসালীন। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলানিউজকে বলেন, কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বর্ণ চোরাচালান ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে নজরদারি, যাত্রীদের তল্লাশি, স্ক্যানিং, যাত্রী ও ক্রু’রা প্লেন থেকে নামার পর প্রতিটি আসন, ওয়াশরুম তল্লাশি করা হচ্ছে। গত ১ অক্টোবর দুবাইফেরত এনামুল হক নামের এক যাত্রীর শরীর তল্লাশি করে ৮২টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। ২৪ ক্যারেটের ৯ কেজি ৫৯ গ্রাম ওজনের এসব স্বর্ণের দাম প্রায় ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।  

এরপর ১৫ অক্টোবর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুবাই থেকে আসা বিজি১৪৮ ফ্লাইটের তিনটি আসনের ভেতর থেকে কালো টেপে মোড়ানো ১১ কোটি টাকা দামের ১৬০টি স্বর্ণের বার পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় পতেঙ্গা মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।  হতে পারে কাস্টমসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির বার্তা চোরাচালানকারীদের কাছে পৌঁছে যাওয়ায় বৈধ পথে স্বর্ণের বার রেকর্ড পরিমাণ আসছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে-গত বাজেটে সরকার ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী স্বর্ণের বার প্রতি রাজস্ব ৩০ হাজার টাকা কমিয়ে ২০ হাজার টাকা করেছে। এতে যাত্রীরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা যাত্রীরা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি স্বর্ণ আনছেন এটা সত্য। কিন্তু কেন এমনটি হচ্ছে সেটি প্রশ্ন। হতে পারে করোনার কারণে অনেকে বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকরি গুটিয়ে একেবারে চলে আসছেন বলেই শেষ সম্বল হিসেবে ২টি করে স্বর্ণের বার আনছেন। আবার এমনও হতে পারে নজরদারির কারণে চোরাচালানের কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ জব্দ হওয়ায় চোরাকারবারিরা কৌশল পাল্টে বৈধ যাত্রীদের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এম ফরহাদ হোসাইন খানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পলিসির কারণে মূলত বৈধপথে স্বর্ণ আনছেন যাত্রীরা। স্বর্ণ আসা যেমন বাড়ছে তেমনি রেমিট্যান্সও বাড়ছে। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি ও কলকাতা মিলে ৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চালু রয়েছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের রেমিট্যান্সযোদ্ধারাই দেশে ফেরার সময় সর্বোচ্চ ২টি করে স্বর্ণের বার আনছেন। এর আর্থসামাজিক অনেক কারণ থাকতে পারে।     

>> বিমানের সিটের নিচে স্বর্ণের বড় চালান
>> বিমানবন্দরে ৮২টি স্বর্ণের বারসহ যাত্রী আটক

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।