ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যে পরামর্শ পেয়েছি তা যৌক্তিক, কিন্তু বাস্তবায়ন কঠিন: সুজন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
যে পরামর্শ পেয়েছি তা যৌক্তিক, কিন্তু বাস্তবায়ন কঠিন: সুজন চসিকের পরামর্শক কমিটির ভার্চুয়াল সভা

চট্টগ্রাম: নগরের বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে নিরসনে কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, পরামর্শক কমিটির কাছ থেকে যে পরামর্শগুলো পেয়েছি সেগুলো যৌক্তিক কিন্তু বাস্তবায়ন করা কঠিন।  

তবে আগামীতে চসিকের নির্বাচিত পরিষদ চট্টগ্রামকে যেন বাসযোগ্য নগরে পরিণত করতে পারেন সে-জন্য কী ধরনের কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার তার একটি ধারণা আমি রেখে যেতে চাই।

 
রোববার (২৯ নভেম্বর) চসিকের পরামর্শক কমিটির সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় তিনি কথাগুলো বলেন।  

তিনি বলেন, চসিকের সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রাখতে সরকারের কাছে বরাদ্দ চেয়েছি।

ইতিমধ্যে কিছু থোক বরাদ্দ পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি সেবাসংস্থা বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তাদের ভারী যানবাহন ও কনটেইনার পরিবহনে চসিকের রাস্তাগুলো ব্যবহার করে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত চাপে সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্দরের মোট আয় থেকে শতকরা ১ ভাগ সার্ভিস চার্জ চেয়েছি। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ল্যান্ডিং অবস্থান এ নগরে। এ কারণে তাদের কাছ থেকেও সার্ভিস চার্জ চসিক পেতে পারে। ইপিজেড হোল্ডিং ট্যাক্স না দিলেও সার্ভিস চার্জ অবশ্যই দেওয়া দরকার।  

সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব, ব্র্যাকের সিনিয়র অ্যাডভাইজার মো. আবদুল করিম বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উচ্চপর্যায়ে চট্টগ্রামের সন্তানরা দায়িত্ব পালন করছেন। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ঢাকায় একটি সভা করা দরকার। এখান থেকে চট্টগ্রামের স্বার্থে অনেক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।  

সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সমন্বয়ের জন্য দরকার একজন মুখ্য কাণ্ডারী। এখানে নগর সরকারের কথা উঠেছে। ১৯৮২ সালে সিটি করপোরেশন অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়ন না হলে নগর সরকার বাস্তবায়ন হবে না। সিটি করপোরেশনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। তবে ভর্তুকি দেওয়ার জন্য নগরবাসী ট্যাক্স দেয় না। এ জন্য চট্টগ্রামের শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি বৈঠক করা দরকার এবং ওই বৈঠক থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত বের করে নিতে হবে।  

দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চসিকের কাছে আমাদের অনেক আশা। তাদের মূল সেবাগুলো নগরবাসী পাচ্ছে কিনা এবং বাড়তি কী পাওয়া উচিত তা আমাদের ভাবতে হবে। সিটি করপোরেশনের লোকসংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে এ সংখ্যা ৬০ লাখের বেশি। তাই লোকবলের অভাব ও আর্থিক সামর্থ্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সিটি করপোরেশন স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। প্রতিটি দেশে একটি লবিং গ্রুপ থাকে। সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য চসিকেরও একটি লবিং গ্রুপ থাকা দরকার।  

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য, কমডোর জোবায়ের আহমদ বলেন, কর্ণফুলী বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে, চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। তাই আগে কর্ণফুলীকে বাঁচানোর জন্য নিয়মিত ও সঠিকভাবে ড্রেজিং সবচেয়ে বেশি দরকার। এতে স্বাভাবিকভাবে চট্টগ্রামের উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পাবে।  

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর টান্সশিপমেন্ট ও একটি ট্রান্সজিট কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিবেশ সৃষ্টির ফলে চট্টগ্রামের সড়কগুলো দিয়ে ভারতের ৭টি রাজ্য এবং নেপাল ও ভুটানে ভারী পরিবহন চলাচল করবে। তাই আমি দাবি করব ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিট থেকে দেশের যে আয় হবে তা থেকে একটি অংশ চসিকে দিতে হবে।  

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম বলেন, চট্টগ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে- এটাকে জাতীয় স্লোগানে পরিণত করতে হবে। চট্টগ্রামে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কিন্তু সমন্বয় নেই। তাই সব সেবামূলক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে একই ছাতার নিচে আনতে হবে।  

মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক আইজিপি মো. নুরুল আলম বলেন, চসিককে বাঁচাতে হলে ঢাকা থেকেই দাবি তুলতে হবে। আমরা ঢাকায় চট্টগ্রাম সমিতির মাধ্যমে চট্টগ্রামের স্বার্থে অনেক দাবি তুলেছিলাম। এখন সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। এজন্য লবিং গ্রুপ তৈরির যে প্রস্তাবটি এসেছে তাকে আমি জোরালো ভাবে সমর্থন করি।  

শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া বলেন, আমি চাই চসিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন বন্ধ হয়ে না যায়। দেশে আর কোনো সিটি করপোরেশনে এত বড় শিক্ষাখাত নেই। আমি আশা করব যুগের চাহিদা অনুযায়ী চসিকের বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান চালু হোক।  

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক আকরাম খান বলেন, ২০ বছর আগে ক্রিকেটসহ যেকোনো জাতীয় দলে চট্টগ্রাম থেকে ৭-৮জন প্রতিনিধিত্ব করতো। এর কারণ চট্টগ্রামে ক্রীড়া উপযোগী মাঠগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের বাড়ির সামনে, আউটার স্টেডিয়ামে ও সার্কিট হাউসের সামনে মাঠে খেলাধুলা করে জাতীয় দলে ঠাঁই করে নিতে পেরেছিলাম।  

ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, চট্টগ্রামে একটি ক্রিকেট একাডেমি হওয়া দরকার। তবে তার জন্য বড় পরিসর প্রয়োজন। আমি প্রস্তাব করছি নগরের বাইরে বড় এলাকা নিয়ে এই ক্রিকেট একাডেমি গড়ে উঠুক।  

তিনি বলেন, চসিক থেকে যে সব সংস্থা সেবা নিচ্ছে, তারা সার্ভিস চার্জ দেবে না কেন। আমি মনে করি করপোরেশনে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের জন্য আলাদা বাজেট থাকা দরকার। চট্টগ্রামে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি রয়েছেন। তারা এগিয়ে এলে সিটি করপোরেশনের ফান্ডের সংকট কেটে যাবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে সিডিএ ও ওয়াসার মতো চসিকেরও একটি মাস্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন।  

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেক বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে সমন্বয় না থাকায় প্রকল্পের অর্থ অপচয় হচ্ছে।  

চসিকের সচিব আবু সাহেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও রাশিয়ার অনারারি কনসাল স্থপতি আশিক ইমরান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, আইইবি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রবীর কুমার সেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।