চট্টগ্রাম: আবৃত্তি সংগঠন প্রমা'র ৩০ বছর পূর্তিতে দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন না হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করে সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এর আগে সদ্য প্রয়াত বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকেরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উপস্থিত সকলে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
চট্টগ্রামের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন।
প্রমা’র সভাপতি রাশেদ হাসানের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, কবি হোসাইন কবির, কবি ইউসুফ মোহাম্মদ, কবি জিন্নাহ চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী দেবাশীষ রুদ্র, মঞ্চমুকুট নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি সুচরিত দাশ প্রমুখ। আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সংগঠনের সহ-সভাপতি জেরিন মিলি ও কঙ্কন দাশ।
ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং এদেশের মানুষের আধুনিক চিন্তাধারার চর্চা আমাকে সবসময় মুগ্ধ করে। মৌলবাদী চিন্তাধারা সমাজের উত্তরণের বড় বাধা। মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা থেকে উত্তরণের জন্য শিল্পচর্চা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নৈতিক মূল্যবোধ তৈরিতেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যোদ্ধারা হাতে হাত রেখে যুদ্ধ করেছে। মৈত্রী এ বন্ধনকে কোনো অপশক্তি বিনাশ করতে পারবে না। এদেশের আবৃত্তিশিল্পীরা খুবই প্রতিভাবান। এদেশে আসার পর প্রমা'র উৎসবেই প্রথম অংশগ্রহণ করি। প্রমা'র সব কর্মকাণ্ডই অসাধারণ। প্রমার আগামী দিনগুলো আরও সমৃদ্ধ হোক, আমরা পাশে আছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেন, সেই মার্চ থেকে আমাদের সব ক্রিয়াকর্ম বন্ধ রয়েছে, যা প্রায় বছর হতে চললো। প্রমা আবৃত্তি চর্চায় ৩০ বছর পার করে ফেলেছে। এখন ৩১ বছরে পা রেখেছে। পঞ্চাশ-ষাটের দশকেও আবৃত্তির কথা তেমন শোনা যেত না। কিন্তু আজকে সারাবিশ্বে আবৃত্তি এখন বিরাট শিল্প। নাটকে যেভাবে নবজাগরণ ঘটে তেমনি আবৃত্তিও নবজাগরণ ঘটায়। প্রমা এগিয়ে যাক, ৩০ বছর নয় কেন কয়েক শতাব্দী টিকে থাকুক।
প্রমার সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, একটা দহনকাল আমরা অতিক্রম করছি। বাধ্য হয়ে মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্ন হয়েছি। এ রকম দুঃসময় আমাদের জীবদ্দশায় হয়তো আমরা পাইনি তবে মানবজাতি এরকম মহামারী অতীতে অনেকবার পার করেছে। সব মহামারী কাল দূর করে বারবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানুষ তার বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমরা বিশ্বাস রাখি মানুষের প্রতি, আস্থা রাখি মানুষের প্রতি। অনেক মাস দূরে ছিলাম এ মঞ্চ, এ কোলাহল থেকে। তারপরও আগের সময়ে ফিরে যেতে পারিনি। নিরাপত্তার বিষয় চিন্তায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেক মাস পরে সবাই মিলিত হয়েছি। এ আয়োজনের মধ্যে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি যত প্রিয়জন, গুণীজন মানুষদের যাদের এ মহামারীতে হারিয়েছি।
এ সময়টাতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া মিলনায়তন খালি পাওয়া যাচ্ছিল না তাই দুই দিন আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা চেয়েছি এ মিলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের ভেতর সাহস সঞ্চার করতে পারি। ঘরবন্দীকালীন আমরা অনেকেই হতাশায় পড়ে গেছি। তাই হতাশার জায়গা থেকে নিজেরা যাতে একটু বেরিয়ে আসতে পারি তাই এ আয়োজন।
৩১ বছর পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৃত্যশিল্পী শুভ্রা সেনগুপ্তার পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্সের শিল্পীরা। একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাবেরী সেনগুপ্তা, শিল্পী সংকর, শিল্পী শ্রেয়সী রায় ও শিল্পী নাজরাতুন তিভা।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি হাফিজ রশিদ খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে কবি টোকন ঠাকুরের লেখা মহাকাব্যের ট্র্যাজেডি কবিতা আবৃত্তি করেন প্রমা'র আবৃত্তিশিল্পী মঞ্জুর মুন্না। এছাড়াও একক আবৃত্তি করেন সংগঠনের আবৃত্তি শিল্পী সাইফুর রহমান, রাজু দাশ গুপ্ত, রোমানা আফাজ রুমী, সালমা জাহান, রুনা চৌধুরী, নাজমুল সাদেকী সুমন, আচরারুল হক প্রমুখ।
১৯৯০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রমা আবৃত্তি সংগঠন যাত্রা শুরু করে। কোভিড-১৯ এর কারণে উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন রোববার (২৯ নভেম্বর) ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে আয়োজন করা হয়েছে। কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, গান, নৃত্য ও কথামালা নিয়ে সাজানো হয়েছে ৩০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
এআর/এমআর/টিসি