ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১১ বছর রেল ভবনের দিকে তাকিয়ে থাকা

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
১১ বছর রেল ভবনের দিকে তাকিয়ে থাকা সিআরবি

চট্টগ্রাম: রেলওয়ের ২০০৯ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৪৫ জন চাকরিপ্রার্থী। এদের মধ্যে ১৩৭ জনের নিয়োগ হলেও ৮ জনের নিয়োগ হয়নি।

১১ বছর ধরে রেলভবনে যাওয়া-আসার মধ্যেই আছেন তারা। রেলভবন থেকে নিয়োগের চিঠি আসবে, সেই আশায় এখনও বুক বেঁধে আছেন তারা।
পোস্ট অফিসে খোঁজ রাখছেন নিয়মিত।

২০০৯ সালে অফিস সহকারী কাম-টাইপিস্ট ও স্টেনো টাইপিস্ট ১৪৫ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় রেলওয়ে। ২০১০ সালে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার পর, উত্তীর্ণ ১৪৫ জনকে চূড়ান্ত প্যানেলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব কাজ শেষ করার পরও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ নানা কারণে নিয়োগটি স্থগিত রাখে তখন।  

চূড়ান্ত প্যানেল তালিকার উত্তীর্ণ প্রার্থীরা রেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে রেলওয়ের মহাপরিচালক রিভিউ রায়ের কপি হাতে পেলেও আদেশ অনুয়ায়ী পুরো প্যানেলের নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারেনি রেলওয়ে।

পরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নম্বর (পূর্ব)-৩/০৯, (তারিখ: ০৫.০৫.২০০৯) অনুযায়ী উত্তীর্ণ প্রার্থীরা হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নম্বর ৬৯৪২/২০১৩) দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ১২ জুন হাইকোর্ট লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন। রেলওয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল (নম্বর ৯৩৬/২০১৫) করলেও ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়।  

পরে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দায়ের করলে (নম্বর ৪৯/২০১৬) ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ রিভিউ পিটিশনও খারিজ করে আগের রায় বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল রেলওয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক রিভিউ রায়ের কপি হাতে পেলেও ১৪৫ উত্তীর্ণ প্রার্থীর মধ্যে ৮ জনকে এখনও নিয়োগ দেয়নি।

ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী মনি চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে জানান, ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবছর কয়েকবার করে কাগজপত্র নিয়ে রেলভবন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে যাওয়া-আসার মধ্যেই আছেন তারা। রেলওয়ে থেকে বারবার কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়, তারা কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু কয়েকমাস পর আর কোনো খবর থাকে না।

২০১৯ সালের ১৮ জুনও উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সিআরবিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কাগজপত্র ৮ জন উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থী উপস্থিত হন। ওইসময়ে শিগগিরই নিয়োগপত্র পাবেন বলে আশ্বস্ত করেন অতিরিক্ত পদে থাকা সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার মো. আবু খালেদ চৌধুরী। কিন্তু এখনও নিয়োগপত্র ইস্যু করেনি।  

২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৮ জন মহাব্যবস্থাপক। তারা হলেন-মকবুল আহমেদ, নুরুল আমিন, ইউসুফ আলী মৃধা, তাফাজ্জল হোসেন, মোজ্জামেল হক, ফারুক আহমেদ, নাসিরউদ্দিন ও সর্বশেষ অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন সরদার সাহাদাত আলী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চাকরিপ্রার্থী জানান, তারা সেই ২০০৯ সাল থেকে প্রত্যেক জিএমের কাছে গেছেন। সবাই শুধু আশা দিয়েছেন, এখনও পূর্ণ প্যানেল নিয়োগ দিতে পারেননি।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করা সরদার সাহাদাত আলী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে একটি ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর গঠিত হওয়া ওই কমিটিতে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান আহবায়ক করা হয়। সদস্য সচিব করা হয় সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার ইতি ধর ও সদস্য করা হয় সিনিয়র পার্সোনেল অফিসার মো. নজরুল আজাদকে।

পরে যাচাই কমিটি ২৪ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি ইস্যু করে ২৯ সেপ্টেম্বর আবারও তাদের কাগজপত্র জমা দিতে বলে। কিন্তু ওইদিন ৮ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৫ জন। তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বাংলানিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত অনেকবার কাগজপত্র জমা দিয়েছি। সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর কাগজপত্র চাওয়ার পর আমরা ৫ জন কাগজপত্র জমা দিয়েছি। জানিনা, এবার নিয়োগ হবে কি-না।

মনি চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সালের হাইকোর্টের রায় প্রদানের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আইনি বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করে রায় বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে রেল কর্তৃপক্ষ। আমরা লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমাদের নাম চূড়ান্ত প্যানেলেও ছিলো। অথচ ২০১০ সালের নিয়োগ এখনও হয়নি।

জানতে চাইলে সরদার সাহাদাত আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখনও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। তবুও দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দিয়েছি। অলরেডি কমিটি কাজ করছে।

এখন রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বন্ধ থাকায় নিয়োগ দিতে পারছি না।  সামনে কয়েকমাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হলে, তখন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।