চট্টগ্রাম: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজের দামে স্বস্তি ফিরলেও বেহাল আলুর বাজার। পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম নিয়ে রীতিমতো লুকোচুরি খেলা চলছে।
ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পর আদা, রসুন আমদানিকারকসহ বড় কয়েকটি শিল্পগ্রুপ মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যসহ দেড় ডজনের বেশি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে এসব পেঁয়াজের চালান দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসতে শুরু করে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. আসাদুজ্জামান বুলবুল বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) পর্যন্ত সমুদ্রপথে ৩৩০টি আমদানি অনুমতিপত্রের বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ২১ হাজার ৩২১ টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র ইস্যু করেছি আমরা। মোট ৫৬৭টি আইপির বিপরীতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৪ টন পেয়াজের আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে। এর বাইরে ঢাকা থেকেও আইপি নিয়েছেন অনেক আমদানিকারক।
খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বড় বিপণিকেন্দ্র হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৬৮-৭০, দেশি ৭৮ টাকা বিক্রি হলেও পাকিস্তান, মিশর, চীনা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪৫-৬০ টাকা। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পর বাড়তি দাম থেকে এখন পাইকারিতে ১০-১৫ টাকা কমেছে। ধীরে ধীরে যার প্রভাব খুচরায়ও পড়েছে।
আড়তদার হাজি মিন্টু সওদাগর জানান, রেফার কনটেইনারে আনার পরও কিছু পেঁয়াজের মান খারাপ হওয়ায় নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হয়েছে আড়তে। পাইপলাইনে থাকা পেঁয়াজ বন্দর থেকে খালাসের পর দ্রুত দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
টিসিবির আঞ্চলিক প্রধান জামালউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, আজ নগরে ১২টি ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ট্রাকে ১ টন (১ হাজার কেজি) পেঁয়াজ দেওয়া হয়েছে। একজন ভোক্তা ৩০ টাকায় ১ কেজি পেঁয়াজ পাবেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজের সঙ্গে চিনি, ডাল, তেল কেনা বাধ্যতামূলক নয়। তারপরও আমরা পেঁয়াজ ছাড়া বাকি পণ্য কমিয়ে দিয়েছি ট্রাকগুলোতে।
চট্টগ্রামে টিসিবির ট্রাকে এখনো আলু বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানান তিনি।
নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারে আলু নিয়ে আসেনি বেপারীরা। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১০টি আড়তকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানার পর বেপারীরা আলুর ট্রাক পাঠায়নি।
সুমন ট্রেডার্সের আবু তৈয়ব বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কমিশন এজেন্ট। বেপারী হিমাগার থেকে আলু কিনে পাঠায়, তাদের নির্ধারিত দরে আলু বিক্রি করি। একজন বেপারী জানিয়েছে আলু হিমাগার থেকে বের করে শুকানোর পর আরেক পার্টি এসে ৩৬ টাকায় নিয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মধ্যম চাক্তাই, স্টিলমিল কাটগড়, পাহাড়তলী এলাকায় আলুর কিছু ট্রাক এসেছে। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা পর্যন্ত।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, আলু পেঁয়াজ নিত্যপণ্য। সরবরাহ ও উৎপাদন বাড়াতে হবে। টিসিবিকে শক্তিশালী করে চিনি, ডাল, তেল, ছোলা, খেজুরের মতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কালোবাজারি যাতে না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে কিন্তু আতঙ্ক ছড়ানো যাবে না।
তিনি বলেন, পেঁয়াজে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে। বড় বড় পেঁয়াজে অভ্যস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। কিন্তু আলুর বাজার এখনো বেহাল।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২০
এআর/এসি/টিসি