ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কেজিডিসিএলের ২৩ কোটি টাকা বকেয়া আদায়, ১২ শতাধিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
কেজিডিসিএলের ২৩ কোটি টাকা বকেয়া আদায়, ১২ শতাধিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: অবৈধ গ্যাস লাইন ও রাইজারের ত্রুটি পরীক্ষায় মাঠে নেমে দেড় মাসে এক হাজার ২২৭টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। এ সময়ে জরিমানা ও বকেয়াসহ ২২ কোটি ৯৬ লাখ ৫১ হাজার ৮১৩ টাকা আদায় করা হয়।

করোনাকালে সাড়ে পাঁচ মাস অভিযান বন্ধ থাকার পর ৬ সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামে কেজিডিসিএল। কোম্পানির আওতাধীন ১২টি জোনে চারটি বিশেষ টিম গ্যাস লাইন ও রাইজারের ত্রুটি সরেজমিন পরীক্ষা করে।

 

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে ও ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবুল কালামের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম ৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।

২০১৯ সালের নভেম্বরে পাথরঘাটায় বড়ুয়া ভবনের বিস্ফোরণের পর গ্যাস লাইন পরীক্ষার জন্য চারটি টিম গঠন করা হয়। ওই সময়ে অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা এড়াতে বিনামূল্যে নগরের প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার গ্যাস রাইজার পরীক্ষা ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গ্যাস রাইজার পরীক্ষার জন্য শতাধিক প্রকৌশলী ও ৪০ জন রিপেয়ারম্যানের সমন্বয়ে ৩০টি টিমও গঠন করা হয়েছিলো।

কিন্তু কাজ কিছুদিন করার পর আর এগোয়নি। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাসের লাইনে লিকেজের অভিযোগ ওঠার পর সারা দেশে সব গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে গ্যাস লাইন ও রাইজার পরীক্ষার নির্দেশ দেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে গ্যাস লাইন ও রাইজার পরীক্ষার জন্য ১২টি টিম গঠন করে এ অভিযান পরিচালনা করছে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ।

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত দেড় মাসে কেজিডিসিএলের বিশেষ টিম ২০৪টি অভিযান পরিচালনা করে। আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প/ক্যাপটিভ, সিএনজি/ক্যাপটিভে  ৭ হাজার ১২৯টি সংযোগ পরিদর্শন করে অবৈধ ১ হাজার ২২৭টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরমধ্যে আবাসিকে ১ হাজার ১৬৭টি, বাণিজ্যিকে ৪৮টি, শিল্প এলাকায় ১১টি ও সিএনজি স্টেশনে একটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

আবাসিকে ১ হাজার ১টি সংযোগের বিচ্ছিন্ন করা হয় বকেয়ার কারণে, অবৈধ সংযোগ নেওয়ার কারণে ১৩৩টি, গ্যাস লাইনে লিকেজ থাকার কারণে ১২টি, আবদ্ধ/ঝুঁকিপূর্ণ থাকার কারণে ২১টি রাইজারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।  

এছাড়া বাণিজ্যিক এলাকায় বকেয়া থাকায় ৩৭টি, অবৈধ সংযোগ থাকায় ৭টি, লিকেজ থাকায় ২টি, ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় ২টি রাইজার বিচ্ছিন্ন করা হয়। শিল্প ও সিএনজি স্টেশনে বকেয়া থাকায় ১২টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো ১৮০টি রাইজার 

কেজিডিসিএলের বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ৫৮টি রাইজার লিকেজ, আবদ্ধ ২৭টি ও ঝুঁকিপূর্ণ রাইজার ৯৫টি পাওয়া যায়। কর্মকর্তারা বলছেন, এ ১৮০টি রাইজার ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো অর্থাৎ যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারতো।

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ত্রুটিপূর্ণ রাইজার শনাক্ত করার পর অনেক রাইজার মেরামত করে দেওয়া হয়। আবার অনেক রাইজার নতুন দেওয়া হয়।

রাইজার লিকেজ মেরামত ও আবদ্ধ রাইজার উন্মুক্ত স্থানে স্থানান্তরের সংখ্যা হলো- জিআই রাইজার ৪৭টি, এমএস রাইজার ১০২টি, এম এস লাইনের লিকেজ রাইজার মেরামতের সংখ্যা ১৪৩টি, আবদ্ধ রাইজার উন্মুক্ত স্থানে সরানোর সংখ্যা ২৯টি এবং ঝুঁকিপূর্ণ রাইজার নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয় ২৩টি।

মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, আমরা বেশ আগেই রাইজার ও গ্যাস লাইনের ত্রুটি শনাক্তের কাজ শুরু করেছিলাম। করোনা পরিস্থিতির কারণে মাঝখানে কয়েক মাস বন্ধ ছিল। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে চারটি বিশেষ টিম অভিযানে নেমে দেড় মাসে প্রায় ২৩ কোটি টাকা বকেয়া ও জরিমানা আদায় করেছে।

তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। যেখানে অবৈধ কিছু পাচ্ছি সে যেই হোক ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ অভিযান আরও দুই সপ্তাহ চলমান থাকবে।  

চট্টগ্রামে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫টি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।