ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জাহাজে আমদানি পণ্য বোঝাইয়ের ১৫ দিন আগে ‘ওয়েভার’ আবেদনে জটিলতা

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
জাহাজে আমদানি পণ্য বোঝাইয়ের ১৫ দিন আগে ‘ওয়েভার’ আবেদনে জটিলতা চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম: বিদেশি বন্দরে আমদানি পণ্য বোঝাইয়ের ১৫ কার্যদিবস আগে ওয়েভার আবেদন করার আইন কার্যকর করায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৯ সালের নতুন আইনটি গত ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকরের জন্য শিপিং এজেন্ট বা মালিককে প্রেসক্রাইভ অথরিটি বরাবর অনলাইন আবেদন করতে আদেশ জারি করেছে নৌবাণিজ্য দফতর।

শিপিং এজেন্ট, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা ১৫ দিন থেকে কমিয়ে ৫ দিনে নামিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।  

সূত্র জানায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইস্যু করা আদেশে শিপিং এজেন্টদের বলা হয়েছে- বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল (প্রোটেকশন) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ রহিতক্রমে এর বিধানাবলি বিবেচনাক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে ২০১৯ সালে নতুন আইন ও ওই বছরের ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেট ধারা ৩ সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ (৩) উপধারা (১) এর দফা (খ) অনুযায়ী মোতাবেক বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজ মালিক বা তার প্রতিনিধিকে আমদানি ও রফতানি পণ্য বোঝাই করার অন্যূন ১৫ কার্যদিবস আগে ওয়েভার সনদ পাওয়ার জন্য নিধারিত কর্তৃপক্ষ বরাবর অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

  

নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে ওয়েভার আবেদনের শর্ত শিথিল করে ৫ কার্যদিবস করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলমগীর কবির।  

চিঠিতে বলা হয়েছে- উপমহাদেশীয়/পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বন্দর এবং বাংলাদেশের বন্দরের মধ্যে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাহাজ আসা-যাওয়া করে এবং উক্ত ভয়েজ টাইম ৪-৫ দিনের বেশি হয় না। ফলে এসব বন্দরের মধ্যে পণ্য আমদানি ও রফতানির জন্য ১০ কার্যদিবস আগে জাহাজ নির্ধারণ, পণ্য বুকিং করাসহ আনুষঙ্গিক সমুদয় কাজ সম্পাদন কিছুতেই সম্ভবপর নয়। স্বল্পকালীন ভয়েজ পিরিয়ডের জন্য ১৫ কার্যদিবস আগে এলসি খোলা সম্ভবপর নয়। এসব কারণে ওয়েভার প্রাপ্তির লক্ষ্যে পণ্য বোঝাই করার জন্য ১৫ কার্যদিবস আগে আবেদন করা সংক্রান্ত ধারা কার্যকর করা সম্ভবপর নয়। এ ছাড়া আমদানি রফতানি পণ্য বোঝাই করার সুদীর্ঘকাল আগে ওয়েভারের আবেদন করা হবে বিধায় পরবর্তী সময়ে কার্গো ডিকলারেশন পরিবর্তন হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। দূরপাল্লার ভয়েজে জাহাজের পূর্বনির্ধারিত লাস্ট পোর্ট অব কল অনেক সময় পরিবর্তন হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে ডিকলার্ড কার্গো পরিবহনের জন্য নির্ধারিত জাহাজও পরিবর্তন করতে হয়। উক্ত শর্ত পরিবর্তন না করলে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।  

সীকম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজকে সুবিধা দেওয়ার জন্য আইনটি করা হলেও, বাংলাদেশে মোট আমদানি পণ্যের ভলিয়্যুমের ৫ শতাংশ আনার মতো নিজস্ব জাহাজও নেই। তাই ১৫ দিন আগে ওয়েভার সনদের আবেদনের বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে হয়নি বলে আমি মনে করি। অনেক সময় জাহাজ চার্টারিং করতে হয় ২-৩ দিন আগে। এর ফলে একদিকে দেশে আমদানি নির্ভর কাঁচামালের শিল্পগুলোর ব্যবসার ব্যত্যয় ঘটবে অন্যদিকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে একটি নেতিবাচক ধারণা হবে। তাই এ আইনটি সংশোধন কিংবা আইনগতভাবে ১৫ দিনের স্থলে ৫ দিন করার উদ্যোগ নিতে হবে।  

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ দিন আগে ওয়েভারের আবেদনের আদেশ জারির পর থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, আমদানিকারক, শিপিং এজেন্ট বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের দাবি থাকবে এটি ৫ দিনে নামিয়ে আনা হোক।  

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ এখনো পর্যাপ্ত হয়নি। বিদেশি জাহাজ চার্টার করে সিংহভাগ আমদানি পণ্য আনতে হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডের বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৫ দিন আগে কোন জাহাজে কোন পণ্য আসবে তা নির্ধারণ করা অসম্ভব। এমনিতে লোড কমবেশি করলে ডিক্লারেশন, জাহাজের নাম পরিবর্তন করলে পেনাল্টি, আইজিএম সংশোধনসহ অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এর মধ্যে ওয়েভার পাওয়ার জন্য ১৫ কার্যদিবস আগে আবেদন করাটা যুক্তিযুক্ত নয়। এ আইন সংশোধনের দাবি জানাই আমরা। আপাতত সাময়িকভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশ জারি করে হলেও ৫ দিনে নামিয়ে আনতে হবে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে।   

নৌবাণিজ্য দফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার ও প্রেসক্রাইভ অথরিটি ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আইন কার্যকরের লক্ষ্যে আদেশ জারি করা হয়েছে। এখন যদি ১৫ দিনের স্থলে ৫ দিন করতে হয় তবে আইন সংশোধন করতে হবে। নয়তো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় যদি নির্বাহী আদেশ দেন এ বিষয়ে তাহলে শিথিল করা সম্ভব।  

বর্তমানে বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে ৬৩টি। চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা মিলে আন্তর্জাতিক রুটে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয় প্রায় ৫ হাজার ট্রিপ। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে ৩ হাজার ৭৬৪টি। মোংলা বন্দরে এ সময় জাহাজ এসেছে ১ হাজার ১৮৯ ট্রিপ, গেছে ১ হাজার ১৯৫ ট্রিপ।   

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।