ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বন্দরে পণ্য লোপাট চক্রের হোতা সাইফুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২০
বন্দরে পণ্য লোপাট চক্রের হোতা সাইফুল সাইফুল ইসলাম (সাইফ)।

চট্টগ্রাম: ব্যবসায়িক পার্টনারের ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার জন্য অপহরণ নাটক সাজিয়েছেন চট্টগ্রামের কথিত সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম (সাইফ)।

অপহরণের নাটক সাজিয়ে ৭০ কোটি টাকার দেনা থেকে রেহাই পেতে গিয়ে এবার নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন মিরসরাইয়ের বাসিন্দা এই ব্যবসায়ী।

সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী নওশাদ মাহমুদ রানার ৭০ কোটি টাকাসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর শত কোটি টাকা মেরে দিয়ে রাতারাতি গাড়ি-বাড়ির মালিক বনে যাওয়া প্রতারক সাইফুলের বিষয়ে অনুসন্ধানে চালালে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানিকৃত পণ্য ও কন্টেইনার গায়েব চক্রের মূল হোতা সাইফুলের বিরুদ্ধে রয়েছে অর্ধডজন প্রতারণা ও লুটপাটের মামলা।

 

ঢাকার কেরাণীগঞ্জের আমদানিকারক মো. আল আমিন চৌধুরী জানান, ২০১৮ সালে বিদেশ থেকে সুলভ মূল্যে কসমেটিকস ও চশমা সামগ্রী আমদানি করেন তিনি।  সাইফুলের মালিকানাধীন সিএন্ডএফ এর মাধ্যমে এসব সামগ্রী খালাস করার জন্য চুক্তি হয়। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে উত্তরা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা ও আল আরাফাহ ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা থেকে মোট ১১ কোটি ১৯ লাখ দেওয়া হয়। এই টাকার বিপরীতে সাইফুল গং মালামালের ট্যাক্স, কমিশন, শিপিং চার্জ ও পোর্ট চার্জসহ মোট ৪ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার ৯শ টাকার বিদেশি মালামাল সরবরাহ করে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুই চালানের মালামাল খালাস করার জন্য ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার ডকুমেন্ট তার ব্যবসায়িক পার্টনারের মাধ্যমে পল্টন মডেল থানাধীন মো. রাজিব খানের রাজিব এন্টারপ্রাইজে জমা নেয়। পরবর্তীতে বন্দর থেকে মালামাল খালাসের কথা বলে আরও ৫০ লাখ টাকা নেয়। টাকা নেওয়ার পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় প্রতারক সাইফুল ও তার পার্টনাররা।  

মো. আল আমিন চৌধুরী বলেন, পরবর্তীতে আমার আমদানিকৃত মালামাল তারা খালাস করে আত্মসাৎ করে। এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ৫ জনের বিরুদ্ধে গত ২৭ জানুয়ারি নগরের ডবলমুরিং থানায় মামলা করা হয়।  

এ অবস্থায় নওশাদ মাহমুদ রানার ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে থাকা সাইফুল সাজিয়েছে অপহরণ নাটক। গত শুক্রবার সাইফুলের ব্যবসায়িক পার্টনার, ফাহমিদা করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী নওশাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণের নাটক সাজিয়ে রাতেই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় বৈঠক করেন এবং সেখানে তিনি অঙ্গিকার করেন, সোমবারের (১৯ অক্টোবর) মধ্যে টাকা ফেরত দেবেন।

এ ব্যাপারে নওশাদ মাহমুদ রানা বলেন, নগরের ঈদগাঁ বউবাজার দুলহান কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুক্রবার বিকালে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে অপহরণের বিষয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেটি তার পরিবারের সাজানো নাটক।

তিনি বলেন, সাইফুল আমার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিল। আমরা যৌথভাবে এস এন ট্রেড, আর এস করপোরেশন এবং ফাহমিদা করপোরেশন নামে বিগত ৮ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে এসেছি। আমার একমাত্র সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকতে হতো। এ কারণে ব্যবসার ৭ হাজার বিল অব এট্রির বিপরীতে আমদানিকারকদের সকল লেনদেনের টাকা পার্টনার সাইফুলের হিসেবে জমা হতো। মাঝে মধ্যে কিছু খরচের টাকা আমি নিলেও লাভের সমুদয় টাকা তার হিসেবেই জমা থাকতো। পরবর্তীতে ব্যবসার চূড়ান্ত হিসেব চাইলে সে কালক্ষেপণ করতে থাকে। পরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা দিলেও বাকি টাকা না দিয়ে সে আত্মগোপনে ছিল। গত শুক্রবার দুলহান ক্লাবে তার কাছে পাওনা টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সে আবারও মিথ্যা আশ্বাস দেয়। একপর্যায়ে তার স্ত্রী হালিশহর থানায় গিয়ে স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে মিথ্যা অভিযোগ করে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সংবাদে আমাকে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আমি যুবলীগের ওমর ফারুক গ্রুপের সদস্য ছিলাম না। আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তবে হালিশহর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের অভিযানের মুখে অপহরণকারীরা ভিকটিম সাইফুলকে তার বাসা কনকর্ড টাওয়ারের নিচে রেখে গেছে। আমরা চিকিৎসার জন্য তাকে মেডিক্যালে পাঠিয়েছি। সাইফুল আলমের স্ত্রী থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন। আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। তদন্তে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২০ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।