চট্টগ্রাম: উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক সিস্টেম। ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সবগুলো স্টেশনেই প্রয়োজন হয় স্টেশন মাস্টারের।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীনে বর্তমানে ৮৫টি স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনে কর্মরত আছেন ৮৫ জন স্টেশন মাস্টার।
তবে ট্রেন পরিচালনার কাজ সার্বক্ষণিক তদারকি করেন স্টেশন মাস্টার। অর্থাৎ ট্রেনকে সিগন্যাল দেওয়া, ট্রেন রুটে কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না, এক লাইন থেকে আরেক লাইনে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া, ট্র্যাক (রেললাইন) পরিবর্তন করা, একটি বগির (কোচ) সঙ্গে আরেকটি বগি সংযুক্ত করা এবং কোনো বগির ত্রুটি থাকলে তা অন্য লাইনে সরিয়ে নিয়ে নতুন বগি সংযুক্ত করাসহ বিভিন্ন স্থানে লেভেল ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন স্টেশন মাস্টার।
তারা এসব কাজ করেন নিজে উপস্থিত থেকে। এবার তাদের এসব কাজ ডিজিটালে ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে এই ৮৫টি স্টেশনের কাজ কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালনা করতে পারবেন দুইজন কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে পাহাড়তলীতে সেন্ট্রালাইজড ট্রাফিক কন্ট্রোল (সিটিসি) স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। ট্রেন পরিচালনাকারীদের স্টেশন সিগন্যালিং ব্যবস্থা, লেভেল ক্রসিংগুলোতে সরাসরি পরিচালনাসহ ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করার ক্ষেত্রে সক্ষম করে তোলা হচ্ছে।
সিটিসি এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখান থেকে ট্রেনের অবস্থান, স্টেশন ইয়ার্ডের অবস্থা এবং লেভেল ক্রসিংগুলোর বাস্তব অবস্থা প্যানেলে দেখা যাবে। দূরনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ভিডিও ক্যামেরার (সিসিটিভি) মাধ্যমে সিটিসি সেন্টার থেকে লেভেল ক্রসিংগুলোর বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে স্টেশন মাস্টার/কেবিন স্টেশন মাস্টার কর্তৃক স্টেশন সিগন্যালিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার সুবিধা থাকবে। শুধু তা-ই নয়, সিটিসি সেন্টারের সঙ্গে সব স্টেশনের মধ্যে ডিজিটাল/আইপি টেলিফোনের সাহায্যে যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ডেডিকেটেড ক্লোজড লোপ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সিটিসি অপারেটর সংশ্লিষ্ট স্টেশন, গার্ড ও চালকের সঙ্গে তাৎক্ষণিক কথা বলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
পরীক্ষামূলকভাবে সিটিসির কার্যক্রমের আওতাভুক্ত স্টেশনগুলো হলো-চট্টগ্রাম, কালিদহ, হাছানপুর, চিনকি আস্তানা, ফেনী জংশন, নাঙ্গলকোট, মুহূরিগঞ্জ, শর্শদি, নাওটি, ফাজিলপুর, গুণবতি ও লাকসাম জংশন। পরবর্তীতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সব স্টেশন সিটিসিতে নিয়ে আসা হবে।
এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা বলছেন, এই ডিজিটাল সিস্টেম উন্নত দেশে রয়েছে। সিস্টেমটি চালু হলে স্টেশন মাস্টারসহ ট্রেন পরিচালনায় জড়িত কোনো কর্মচারীর প্রয়োজন হবে না। দুইজন সিটিসি কর্মকর্তার মাধ্যমে সবকিছু পরিচালনা করা যাবে। তবে রেলওয়ে মনে করলে সিটিসিতে আরও কয়েকজনকে দিয়ে কাজ করাতে পারবেন।
সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে রেলপথ পরিদর্শন অধিদফতরের সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) অসীম কুমার তালুকদার এই সিস্টেমটি পরিদর্শন করেন। এসময় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি।
অসীম কুমার তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, সেন্ট্রালাইজড ট্রাফিক কন্ট্রোল (সিটিসি) আমাদের দেশে নতুন। তাই বিষয়টি নিয়ে সবাইকে বুঝাতে হচ্ছে। উন্নত দেশে এ সিস্টেমে ট্রেন চলাচল করছে। চট্টগ্রামে পরিদর্শনে গিয়ে সিটিসির মাধ্যমে একটি ট্রেনও পরিচালনা করেছি। আমরা দেখেছি, সিটিসির মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা করা যায়, এ জন্য স্টেশন মাস্টার না হলেও চলে। যেহেতু আমরা নতুন চালাবো, সেজন্য কিছু কিছু স্টেশন মাস্টার থাকবে।
তিনি বলেন, অনেক জায়গায় সিটিসির ক্যাবল কেটে ফেলা হচ্ছে। লোকজন রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় কানেকশন অনেক সময় কেটে যায়। আমি বিভিন্ন দেশে গেছি, সেখানে ক্যাবল কেটে যাওয়ার সমস্যা নেই। আমাদের দেশে রেললাইনের ওপর দিয়ে মানুষ যাতায়াত করে, অন্য দেশে কিন্তু যায় না।
‘আমরা এ সিস্টেমটি চালু করবোই। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা ৪ মাসের জন্য সিটিসির মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা কার্যক্রম চালু করবো। তারপর বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আরও আপগ্রেড করবো। ’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সাদেকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা থেকে এসে পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছে। সিস্টেমটি অনেক ভালো। চালু হলে যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সরদার সাহাদাত আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ধারাবাহিকতায় এটিও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সিটিসি চালু হলে রেলওয়েতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২০
জেইউ/এসি/টিসি