ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের নদ-নদী প্রাকৃতিকভাবে ঐশ্বর্যমণ্ডিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
চট্টগ্রামের নদ-নদী প্রাকৃতিকভাবে ঐশ্বর্যমণ্ডিত বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে সেমিনার।

চট্টগ্রাম: প্রাণীবিজ্ঞানী ড. মো. আনিসুজ্জামান খান বলেছেন, দেশের অনেক নদ-নদী কলুষিত, দখল এবং পরিবেশের বিপর্যয় হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব নদীপ্রবাহ আছে, সেগুলো প্রাকৃতিকভাবে অনেক ঐশ্বর্যমণ্ডিত।

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ‘গ্রিন প্লানেট’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মো. আনিসুজ্জামান বলেন, আমি বেশ কয়েকটি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছি।

এরমধ্যে সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও মাইনী নদী অন্যতম। আমাদের একটি টিম মাতামুহুরীতে কাজ করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক নদ-নদী দখল হয়েছে এবং পরিবেশের বিপর্যয় হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব নদীপ্রবাহ আছে-সেখানে মৎস সম্পদ, জীব-বৈচিত্র এবং নদীর তীরের মানুষের যে বৈচিত্র, নৃ-তাত্ত্বিক যে বৈচিত্র; তারা নদীকে যেভাবে দেখেন আমি মনে করি এটি শুধু দেশের জন্য নয়, এশিয়া মহাদেশের জন্যও অনেক গর্বের বিষয়।

তিনি বলেন, পতেঙ্গা, কর্ণফুলী, হালদা ও বুড়িগঙ্গায় দূষণ বা নেগেটিভ কাজ না করতে আমরা ৩টি পর্যায়ে কাজ করতে পারি। রাষ্ট্রীয়, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা উদ্যোগ নিতে পারি। আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে অর্থাৎ তীরবর্তী যারা আছেন, তারা যদি দূষণ না করি, দখল থেকে বিরত থাকি, বালু উত্তোলন থেকে বিরত থাকি তাহলে নদী রক্ষা করতে পারবো।  

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে নদীর তীরবর্তি মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কারণ তারা যদি দূষণে লিপ্ত থাকে তাহলে ভাটি অঞ্চলে মানুষের ক্ষতিটা বেশি হবে। একইভাবে ভাটির মানুষেরও নদী দূষণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি আমরা এ ৩টি পর্যায়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিই, তাহলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে পারবো। যদি প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা পায় তাহলে দেশের প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ও পরিবেশকর্মী ড. ইদ্রিস আলী বলেন, নদী মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদী জীবনের বাহক, সামাজিকতার পরিবাহক, সংস্কৃতির স্রোতধারা। সভ্যতার শুদ্ধি-শুচিকারক, পরিবৃদ্ধি, পরিচালন, পরিবহন, পরিসমাপ্তিতে নদী অন্যতম অনুষঙ্গ, অনুঘটক। দুঃখ-সুখের দোলায় দোলা জীবনের অবারিত স্রোতের মতো মহাকালের মহাসমুদ্রে জলের জলাঞ্জলি দেওয়াই নদীর নিরবচ্ছিন্ন সাধনা।

তিনি বলেন, নদীর গুরুত্বকে তুলে ধরার জন্য, আমাদের সমাজে নদীর নাব্যতা ও গতিময়তাকে অবারিত রাখার জন্য, নদীর প্রয়োজনীয়তাকে বিশ্বময় জাগিয়ে রাখার জন্য, নদী ঐতিহ্যকে ধারণ করার জন্য, নদী সংকটকে পর্যালোচনার জন্য এবং নদীর সংকটাপন্ন অবস্থাকে সর্বসাধারণ এবং নীতিনির্ধারকদের নজরে আনার জন্য বিশ্ব নদী দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রাণীবিদ্যা বিভাগের কো অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, প্রকৃত তথ্য ও প্রচারের অভাবে হালদা নদীর জাতীয় ঐতিহ্যের পরিচয় সবার দৃষ্টির আড়ালেই রয়ে গেছে। এমনকি দেশের নদী সম্পর্কিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল কিংবা ইতিহাসে এ নদীর নাম অনেকটা অনুচ্চারিত।  

তিনি বলেন, হালদা বাংলাদেশের নদী। হালদাকে কেন বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণা করা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা যদি দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর সঙ্গে তুলনা করি, যৌক্তিকভাবে হালদার নামটি উঠে আসে। কারণ হালদা একমাত্র নদী, যার উৎস ও শেষ আমাদের বাংলাদেশে।

তিনি আরও বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলার ২ নম্বর পাতাছড়া ইউনিয়নের হালদা ছড়া থেকে দেশের মৎস্যখনি খ্যাত হালদা নদীর উৎপত্তি। হালদা ছড়া মানিকছড়ি উপজেলার বেলছড়া ও সালদাছড়া খালের সঙ্গে মিলিত হয়ে হালদা খাল এবং ফটিকছড়ির ধুরং খালের সঙ্গে মিলিত হয়ে হালদা নদীতে পরিণত হয়েছে। পরবর্তীতে এই নদী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রায় ৯৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট নামক স্থানে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। চট্টগ্রামের এই নদীর উৎস ও বিস্তারসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে হালদা একমাত্র নদী যাকে আমরা একান্ত আমাদের দেশের জাতীয় ঐতিহ্য হিসাবে দাবি করতে পারি।

মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, চট্টগ্রামের গর্ব হালদা নদী কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশের অদ্বিতীয় নদী। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল এবং কালিগনি) প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এবং এটিই দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। যুগ যুগ ধরে স্থানীয় অধিবাসীরা বংশপরম্পরায় রুই জাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহ করে নিজস্ব পদ্ধতিতে রেণু উৎপাদন করে দেশের মৎস্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।

‘হালদা নদী বাংলাদেশের রুই জাতীয় মাছের একমাত্র বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক জিন ব্যাংক। এই প্রাকৃতিক জিনপুল বাঁচিয়ে রাখার জন্য হালদা নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রগুলোতে ইনব্রিডিং-এর কারণে মাছের বৃদ্ধি মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে এবং বামনত্ব, বিকলাঙ্গতাসহ বিভিন্ন ধরনের জিনগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দ্রুত বড় আকারের রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিগনি মাছ একসময় রূপকথার গল্পের মতো মনে হবে।

একাত্তর টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মাইনুদ্দিন দুলালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, রাউজান পৌর মেয়র দেবাশীষ পালিত, গ্রিন প্লানেট এর আহ্বায়ক স্থপতি মিজানুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ 
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।