চট্টগ্রাম: প্রায় ধূসর হতে যাওয়া তপ্ত নগরে সবুজের দেখা মিললেই চোখ জুড়ায়। কংক্রিটে ঢেকে থাকা চট্টগ্রাম শহরে এখন অনেকে গড়ে তুলছেন শখের ছাদবাগান।
পাঁচলাইশ থানা কৃষি কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার জানান, করোনাকালে নগরজুড়ে ছাদবাগান গড়ে তোলা এবং আগে থেকে বেড়ে ওঠা বাগানের পরিচর্যায় আগ্রহ বেড়েছে নগরবাসীর।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪০টি ওয়ার্ডে প্রায় দুই হাজার ছাদবাগান গড়তে পাঁচলাইশ থানা কৃষি অফিস, ডবলমুরিং থানা কৃষি অফিস ও পতেঙ্গা থানা কৃষি অফিস সার্বিক সহযোগিতা করেছে। এ ছাড়া আরও অনেক ছাদবাগান গড়তে কিংবা পরিচর্যা করতে আমরা ফোনে, ফেসবুকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।
নগরে ছাদবাগান তৈরিতে সহযোগিতা করছে আগ্রাবাদ সিজিএ ভবনের ‘ছাদবাগান পরামর্শ কেন্দ্র’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পরামর্শ দিচ্ছেন ছাদবাগান উদ্যোক্তারা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী শখের বশেই দেওয়ানবাজারে পাঁচতলা ওয়ার্ড কার্যালয় ভবনের ছাদে বাগান তৈরি করেন। সেই বাগানে এখন মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, করলাসহ ১০ থেকে ১২ ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
পাহাড়তলী থানাধীন সরাইপাড়া আশরাফ আলী সড়কের বাসিন্দা শবনম আরা তার চারতলা খান মঞ্জিল বাড়ির ২৪শ বর্গফুট ছাদে ২শ প্রজাতির প্রায় ৮শ গাছের বাগান তৈরি করেছেন। পেয়েছেন বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কারও। ছাদবাগানে ৬০০টি টব ও পাঁচটি বেডে ২০০ প্রজাতির ৬৫০টি গাছ ও চারা, ২৫ প্রজাতির ফলদ, ১৯ প্রজাতির ভেষজ, ৩৭ প্রজাতির বনজ, ৬০ প্রজাতির শোভাবর্ধক, ২৩ প্রজাতির দেশি বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ রয়েছে।
হালিশহরের কর্ণফুলী আবাসিক এলাকার বিটিআই ভবনের ছাদে ১৫ প্রজাতির ফলদ ও ভেষজ, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাদবাগানে ২০ প্রজাতির ফল ও ফুল গাছ, পাথরঘাটার নজু মিয়া লেইনের ১ নম্বর গলিতে ফটোসাংবাদিক হায়দার আলীর দ্বিতল ভবনের ছাদে ১৪শ স্কয়ার ফিট জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা ছাদ বাগানে ফলদ, ভেষজ, ফুল ও অর্কিড প্রজাতির গাছ নজর কেড়েছে সবার।
হায়দার আলীর ছাদ বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ড্রামে মাটি ভরাট করে ফুল, ফল ও সবজির মাচা তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাগানে ফজলি, আম্রপালি, দেশিসহ ৬টি আম গাছ, ৫টি পেয়ারা গাছ- যার মধ্যে লাল রঙের, কাজি পেয়ারা ও ডোরাকাটা পেয়ারা গাছও আছে। আরও আছে সৌদি খেজুর গাছ, ৬টি লেবু গাছ, ১টি লিচু গাছ, পাহাড়ি কমলালেবু গাছ, মালটা, চেরি ফল, ডালিম, আপেল কূল ও দেশি কূল গাছ ২টি, সফেদা, থাইল্যান্ডের জাম্বুরা গাছ, পেঁপে গাছ। সবজির মধ্যে আছে মিষ্টি আলু, দেশি মরিচ গাছ, শসা, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গা, বেগুন, লাউ, বারমাসি শিম, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া গাছ, পুঁই শাক, লাল শাক ও ফুলের মধ্যে নয়নতারা, লাল গোলাপ, হাসনাহেনা, বেলিসহ ঔষধি নিম ও মেহেদি গাছ।
হায়দার আলী জানান, ঘরের আঙিনায় একসময় ছিল ছোট বাগান। মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিয়ে গাছগুলো বেড়ে উঠতো আপন গরজে। কিন্তু এখন নগরায়নের প্রভাবে ইটের দালানের ওপরেই খুঁজে নিতে হচ্ছে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে। নতুন ভবন তৈরির সময় প্রথমে একতলা ভবনের ছাদে গড়েছিলাম ছাদবাগান। পরবর্তীতে সেই বাগান স্থানান্তরিত হয় দ্বিতল ভবনের ছাদে। ভবন তৈরির সময় সংগৃহীত মাটি সংগ্রহ করে রাখা হয়েছিল। সেই মাটিতেই এখন ছাদ বাগানের গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। ২০১৯ সাল থেকে টপ, ড্রাম ও বালতিতে চারা লাগিয়ে পরিচর্যা শুরু করি। টেলিভিশনে বিভিন্নজনের ছাদ বাগান নিয়ে প্রতিবেদন দেখে এবং পেশাগত কারণে কয়েকটি ছাদবাগান দেখে আমি এই বাগান করতে উৎসাহিত হই।
তিনি বলেন, ফলদ কিছু চারা লালদিঘীর পাড়ের নার্সারি থেকে এবং সবজির চারা ফতেয়াবাদ নার্সারি থেকে কিনে আনি। প্রতিদিন দুইবেলা পানি দেওয়া ও এক সপ্তাহ পর পর বাগান পরিষ্কার রাখতে হয়। গাছে মূলত দেওয়া হয় জৈব সার। এছাড়া কোনও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এই ছাদ বাগান ঘিরে এখন পাখির আনাগোনাও বেড়েছে। ভোরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ভাঙে ঘুম। বিকেলে ছাদ বাগানে এসে সময় কাটান আত্মীয়-স্বজনরা। পরিবারের সদস্যদের বিষমুক্ত খাদ্যর জোগান দিতে এই বাগান গড়েছি। আবার মন খারাপের সময়গুলোতে বাগানের সজীব পাতাগুলো যখন পূব হাওয়াতে দোল খায়, তখন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২০
এসএস/এসি/টিসি