ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বায়েজিদে ‘কিশোর গ্যাংয়ের লিডার’ যারা

সরওয়ার কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৪৯, আগস্ট ৭, ২০২০
বায়েজিদে ‘কিশোর গ্যাংয়ের লিডার’ যারা প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম:  নগরের বায়েজিদ এলাকা। অপরাধীদের অভয়ারণ্য বলা যায় এলাকাটিকে।

আধিপত্য বিস্তার করে চাঁদাবাজি, ছিনতাই আর পাহাড় দখল, জমি দখলই এখানকার অপরাধের নিত্য দিনের চিত্র। এসব অপরাধের কাজে ব্যবহার করা হয় স্থানীয় বখে যাওয়া কিশোরদের।
 


চাঁদাবাজি, ছিনতাই, পাহাড় দখল, জমি দখল সব অপরাধেই সামনের সারিতে থাকে কিশোর অপরাধীরা। অর্থের লোভে পড়ে বা সামান্য প্রভাব প্রতিপত্তির জন্য কতিপয় বড় ভাইদের ছায়ায় আশ্রয় নেয় এসব কিশোররা। আর ধীরে ধীরে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ ছোট ছোট অপরাধ করে পর্যায়ক্রমে খুনের ঘটনাও ঘটায় এরা।


এসব কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এলাকা ভিত্তিক একাধিক বড় ভাই। এসব বড় ভাইয়েরা নিজেদের ‘নিয়ন্ত্রিত’ এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করেন। বড় ভাইয়েরা এছাড়া টাকার বিনিময়ে অন্যের জমি দখল করে দেওয়ার কাজও করান কিশোরদের দিয়ে।


পুলিশের হাতে ধরা পড়লে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে ছাড়িয়ে নেওয়ার কাজটিও করেন কথিত এসব বড় ভাইয়েরা। সরাসরি অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকার সুবাদে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন কথিত এসব বড় ভাইয়েরা।


বায়েজিদ এলাকার যারা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- মোহাম্মদ দুলাল প্রকাশ লাল দুলাল, মো. জাবেদ প্রকাশ ডিস জাবেদ, মফিজ আলম প্রকাশ বাংলা মফিজ, তানভীর, বাবলু, সোহেল প্রকাশ গুটি সোহেল, সালাউদ্দিন।  


এদের মধ্যে দুলাল ও জাবেদের নেতৃত্বে বাংলাবাজার এলাকায় বড় একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। ওই এলাকার ‘নিয়ন্ত্রণ’ তাদের হাতে। তাদের ‘নিয়ন্ত্রিত’ এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয় কিশোর অপরাধীদের। কিশোরগ্যাং লিডার দুলাল যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান বাদল হত্যা মামলাও আসামি। এছাড়া দুলালের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।


শেরশাহ, কুঞ্জছায়া আবাসিক এলাকা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করেন মফিজ আলম প্রকাশ বাংলা মফিজ ও তানভীর। বায়েজিদ এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানায় চাঁদাবাজি, খাসজমি দখল ইত্যাদি তাদের কাজ।  


বাবলু, সোহেল প্রকাশ গুটি সোহেল, সালাউদ্দিনসহ অন্যরাও জড়িত নানা অপরাধে। তাদের অপরাধ সংগঠিত করার হাতিয়ার কিশোররা। তাদের দিয়েই মূলত সব ধরণের অপরাধমূলক কাজ করায় এরা।


১ আগস্ট দিবাগত রাতে বায়েজিদের ডেবারপাড় এলাকায় মো. সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে রাতে তুলে আনতে গিয়েছিল মোহাম্মদ দুলাল প্রকাশ লাল দুলাল, মো. জাবেদ প্রকাশ ডিস জাবেদসহ সন্ত্রাসীরা। ওই ব্যবসায়ী ৯৯৯-এ কল দিলে বায়েজিদ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে সন্ত্রসীরা পালিয়ে যায়। তবে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।  


বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থলে যাওয়া বায়েজিদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নয়ন বড়ুয়া।  


এছাড়া বাংলাবাজার এলাকায় রহিমা বেগম নামে এক নারীর মালিকানাধীন দোকানে চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় তাদের হত্যার হুমকি দেয় জাবেদসহ সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রহিমা বেগম বায়েজিদ থানার অভিযোগ দেন বলে জানা গেছে।  


বাংলাবাজার এলাকায় অবৈধভাবে বসা গ্রাম সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি করে জাবেদসহ সন্ত্রাসীরা। ঈদুল আযহার দুই দিন পর এক সিএনজি অটোরিকশা চালককে মারধর করে বলে জানা গেছে।  


বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পিটন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিই। কাউকে ছাড় দিই না। তবে তাদের বিরুদ্ধে লোকজন অভিযোগ করে না।  


র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলে। নিয়মিত গ্রেফতার হয়। সস্প্রতি বেশ কিছু কিশোর অপরাধীকে আমরা গ্রেফতার করেছি। যারা ছিনতাইকারী, কিশোর অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তাদের আমরা নজরদারিতে রেখেছি। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২০
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।