ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই অ্যান্টিভেনম, ভরসা চমেক হাসপাতাল

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২০
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই অ্যান্টিভেনম, ভরসা চমেক হাসপাতাল ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: আট বছরের শিশু বৈশাখি পাল ঘরে আলনায় থাকা জামা আনতে গিয়ে সাপের কামড় খায়। মাকে জানালে তাৎক্ষণিক নিয়ে আসা হয় পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সেখান থেকে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু পৌঁছানোর আগেই মৃত্যু হয় তার।

পটিয়ার গৈরলা পাল পাড়ার বাসিন্দা সঞ্জীব পাল ও সুজাতা পাল গত বৃহস্পতিবারের (৩০ জুলাই) এ ঘটনায় দুষছেন সময়মতো সাপে কাটার ইঞ্জেকশন না পাওয়াকে। স্থানীয় লরিহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী বৈশাখিকে শুক্রবার (৩১ জুলাই) তারা শেষ বিদায় দিয়েছেন চোখের জলে।

জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পাওয়া অ্যান্টিভেনম সিভিল সার্জনের কাছ থেকে চাহিদা পাওয়ার ভিত্তিতে জেলা সদরে সরবরাহ করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায় না। প্রতিবছর চাহিদার ভিত্তিতে বিভাগীয় হাসপাতালে ৫০০ ভায়াল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ ভায়াল ও সদর হাসপাতালে ৫০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা হয়।

২০১২ সালে বিনামূল্যে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ওষুধও সরবরাহ করে। শুরুতে নগর ও উত্তর জেলার রোগীদের জন্য আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, লোহাগাড়াসহ আশপাশের উপজেলার রোগীদের জন্য সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ সেবা দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা আর সম্ভব হয়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় সাপে কাটা রোগী বাড়ছে। ধরা পড়ছে বিষধর সাপও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বেড়েছে সাপের আনাগোনা। শুক্রবার (৩১ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে পিটিয়ে মারা হয় একটি বিষাক্ত সাপ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপা কাটা রোগী এলে অ্যান্টিভেনম না থাকার কারণে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে চমেক হাসপাতালে।

চিকিৎসকরা জানান, সাপে কামড়ানোর পর একজন রোগীকে শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় ১০টি অ্যান্টিভেনম দিতে হয়। প্রতি ভায়াল অ্যান্টিভেনমের দাম প্রায় এক হাজার টাকা। অনেক ফার্মেসিতেও এই ইঞ্জেকশন মজুদ থাকে। তবে দাম নেওয়া হয় বেশি।

দেশে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ হাজার। গড়ে ১০ হাজার ভায়াল অ্যান্টিভেনমের চাহিদা রয়েছে। সেই হিসেবে ১০০ মিলিয়ন টাকার অ্যান্টিভেনম আমদানি করতে হয়।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে একটি আলাদা কক্ষে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চমেকের পুরোনো অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৫ বছর মেয়াদী প্রকল্পের অধীনে লালন-পালন হচ্ছে ৯ প্রজাতির ১২০টি সাপ। আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে অ্যান্টিভেনম তৈরির লক্ষ্যে এসব সাপ পোষা হচ্ছে।  

প্রকল্পের গবেষক ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে অ্যান্টিভেনম তৈরির কাজ চলছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভেনম তৈরি হলে তা বিভিন্ন প্রাণির শরীরে প্রয়োগ করা হবে। সফলতা এলে মানবদেহে প্রয়োগ করা যাবে। তখন সাপে কাটার এই প্রতিষেধক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে দেশে অ্যান্টিভেনমের সংকট থাকবে না।

গবেষকরা জানান, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বর্ষা ও বন্যায় সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। জলমগ্ন এলাকা ছেড়ে সাপ শুকনো এলাকায় চলে আসে। তাই বন্যাপ্রবণ এলাকার চেয়ে বন্যামুক্ত এলাকায় সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সাপে কাটার ঘটনা বেশি ঘটে। এ কারণে জেলার হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এসব রোগী পাঠানো হয় চমেক হাসপাতালে।

‘দেশের হাসপাতালে যে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়, তা আসে ভারত থেকে। সাপে কাটা রোগীকে দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে না পারায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। সাপে কাটলে শরীরে ধীরে ধীরে রক্ত দূষণ, মাংসপেশি অকার্যকর ও মস্তিষ্ক অকার্যকর হয়ে পড়ে। তবে সাপ কামড়ালেই মৃত্যু হবে এমন ধারণা সঠিক নয়। এজন্য প্রথমে শক্ত কাপড় দিয়ে হালকা করে সাপে কাটা স্থান বাঁধতে হবে। সাপে কাটা পেশি কম নড়াচড়া করতে হবে। কারণ পেশির নড়াচড়া যত কম হবে, বিষ তত কম ছড়াবে। ওঝার ঝাড়ফুঁকের জন্য অপেক্ষা করাও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। ’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাপের কামড়ে মৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে হলে উপজেলা পর্যায়েও পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থা করার বিকল্প নেই। এছাড়া কোন হাসপাতালে কি পরিমাণ অ্যান্টিভেনম মজুদ আছে, তা প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২০
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।