ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাঁশখালীর সংসদ সদস্যকে অপসারণের দাবি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
বাঁশখালীর সংসদ সদস্যকে অপসারণের দাবি  সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের ছেলে জয়নাল আবেদিন

চট্টগ্রাম: মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করায় চট্টগ্রামের বাঁশখালী-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।  

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেওয়া এবং সংসদ সদস্য কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার প্রতিবাদে বুধবার (২৯ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান মৌলভী সৈয়দের পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা।

 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের ছেলে জয়নাল আবেদিন।  

তিনি বলেন, গত ২৬ জুলাই দুপুর দুইটায় আমার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পক্ষ থেকে।

পরদিন ২৭ জুলাই সকাল ১১টায় জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ে শত শত লোক শেখেরখীল লালজীবন গ্রামে জানাজায় অংশ নেন।  

এ মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দিতে আগেভাগেই হাজির হয় পুলিশের টিম। কিন্তু প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ উপস্থিত হননি। জানাজায় উপস্থিত কেউ কেউ এবং মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সঠিক সময়ে উপস্থিত হননি তারা।  পরে জানাজায় মানুষ উত্তেজিত হলে মরদেহ দাফন করে ফেলে পরিবার। এর মধ্যে প্রায় ১১টা ৪৫ মিনিটে সেখানে হাজির হন এসি ল্যান্ড মো. আতিকুর রহমান। দেরিতে গিয়ে এবং লাশ দাফনের পর এসিল্যান্ড গার্ড অব অনার দিতে চাইলে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে বাধা দেন। পরিবারও এতে আপত্তি তোলে।  

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার সেখানে হাজির হয়ে এ মুক্তিযোদ্ধার কবরে ফুল দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। প্রশাসনের এমন ভূমিকা একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে হতাশ করেছে যা অসম্মানের শামিল।  

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমার পরিবারটি মুক্তিযুদ্ধের পরিবার। এটা সবাই জানে। কিন্তু বারেবারে পরিবারটিকে হেয় করতো উপজেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় পদে থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফকে কখনো সভা সমাবেশে ডাকা হতো না। কখনো নিজে গেলেও অপদস্থ করতো। মৃত্যুর পরেও এমন অপদস্থ হওয়ায় আমরা মানতে পারি নি।

আমরা ধারণা করছি প্রশাসনকে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়েছে। এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর গণমাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বাঁশখালীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে তীর্যক মন্তব্য প্রদান করেন। তার বক্তব্য আমাদের হতবাক করেছে।

আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করায় তার শাস্তি দাবি করছি।  

সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধের পরিবারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে প্রশাসনের দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার এবং সংসদ সদস্যকে দলীয় পদ থেকে অপসারণের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন না। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে অনুপ্রবেশ করে বাঁশখালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন।  

তিনি কখনও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও আওয়ামী লীগের অসম্প্রদায়িক নীতি ধারণ করতে পারেননি। এমনকি তিনি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আমরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পক্ষ থেকে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে সংসদ সদস্যের পথ থেকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতা সরওয়ার আলম মনি, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিমু হামিদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়:২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।